
নাহমাদুহু ওয়া নুছল্লী আলা রসূলিহিল কারীম। আম্মা বা‘দ।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাসমূহের একমাত্র জাতীয় সংস্থা। বাংলাদেশের কওমী মাদরাসা সমূহের তা‘লীম ও তারবিয়াতের মান উন্নয়নই এ সংস্থার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তা‘লীম-তারবিয়াতের মান উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণ তা‘লীম-তারবিয়াতের মান উন্নয়নেরও একটা পন্থা। যারা ভাল মান অর্জন করে, তাদেরকে পুরষ্কারও দেয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণের নিমিত্ত মাদরাসাসমূহকে বেফাক-এর অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। আর এ অন্তর্ভূক্তির জন্য নীতিমালা প্রয়োজন বিধায় এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হল। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি এবং যে সব নিয়মাবলী অন্তর্ভূক্ত করা অপরিহার্য মনে করেছি, তা গ্রহণ করেছি। কারোর দৃষ্টিতে যদি কোন বিষয় বা নিয়ম এতে সংযোজন করা বাঞ্ছনীয় মনে হয়, তা হলে তা লিখিতভাবে অবহিত করতে মর্জি করবেন। আমরা যতœ সহকারে তা এ নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত করে নিব ইনশা আল্লাহুল আযীয।
আরয গোযার
তাং- ১০/০২/৩৭ হিজরী
(মুহাম্মাদ আবদুল জব্বার)
মহাসচিব
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
(বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড)
জ্ঞাতব্য : ০১/০১/২৭ হিঃ মুতাবিক ০২/০১/০৬ ঈঃ হতে কার্যকর
মকতব, প্রাইমারী, কিন্ডার গার্টেন, হিফয, ইলমুত তাজবীদ ওয়াল কিরায়াত, শর্ট কোর্স, দরসে নেজামী মাদরাসা পুরুষ এবং মহিলা মাদরাসার বেফাকভুক্তির নিয়মাবলী ও শর্তাবলীঃ
নিয়মাবলী ঃ
১. অন্তর্ভুক্তির আবেদনের তারিখ পর্যন্ত মাদরাসার বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে।
২. বেফাক-এর উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, আদর্শ এবং দায়িত্ব-কর্তব্যের সাথে মাদরাসা-এর উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক, আদর্শ, ঐতিহ্য ও কার্যাবলীর সাথে মিল থাকতে হবে।
৩. মাদরাসা পরিচালনার নিমিত্ত কমিটি থাকতে হবে। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত (১০ম মানের মাদরাসা পর্যন্ত) মাদরাসার জন্য একটি মাত্র মজলিসে শূরা থাকতে হবে। আর উচ্চস্তরের মাদরাসার জন্য দু’টি কমিটি শূরা ও আমেলা থাকতে হবে।
কমিটি গঠন পদ্ধতি ঃ
৪. বেফাক কর্তৃক প্রদত্ত দস্তুরুল মাদারিস-এ বর্ণিত বিধি-বিধান-এর ভিত্তিতে কমিটি গঠন করে তা বেফাক দফতরে জমা দিতে হবে।
৫. বেফাক থেকে উপরোক্ত কমিটি মঞ্জুর করিয়ে আনতে হবে।
৬. মাদরাসার জন্য একটি দস্তুর (গঠনতন্ত্র) থাকতে হবে। বেফাক কর্তৃক প্রণীত দস্তুরুল মাদারিস-এর আঙ্গীকে এটি প্রণয়ন করে বেফাক থেকে তা মঞ্জুর করিয়ে নিতে হবে।
৭. বেফাক-এর অন্তর্ভুক্তির জন্য মাদরাসার শূরার/আমেলার সিদ্ধান্ত থাকতে হবে এবং সিদ্ধান্তের রেজুলেশনের কপি বেফাকভুক্তির আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
৮. বেফাক কর্তৃক প্রদত্ত নেছাবনামা, পাঠদান পদ্ধতি, পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি, তা‘লীম তারবিয়াত দান পদ্ধতি এবং মাকাদীরে আসবাক অনুসরণ করতে হবে। বেফাক কর্তৃক নির্ধারিত পাঠ্য বই/কিতাব পাঠ্য করতে হবে।
৯. দরখাস্ত দিয়ে ইলহাক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। কাগজপত্র বাবত নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে অফিস থেকে দু’ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। যথাঃ-
বেফাকভূক্তির আবেদন পত্র- পূরণ করে বেফাক দফতরে জমা দিতে হবে (পুরুষ ফরম) ডাউনলোড করুন
(মহিলা ফরম ) ডাউনলোড করুন
এতদসঙ্গে আরো জমা দিতে হবেঃ-
০১. ধার্যকৃত ইলহাকী ফি, এই লিংকে
০২. চলতি শিক্ষা বছরের বার্ষিক ফি।
০৩. বেফাক-এর অন্তর্ভূক্ত হবার ব্যাপারে মাদরাসা কমিটির রেজুলেশনের ফটোকপি। সভাপতি,
সেক্রেটারী ও মোহতামেম-এর দস্তখত ও সীলসহ।
০৪. মাদরাসার গঠনতন্ত্র- ২ কপি।
গঠনতন্ত্র তৈরি করা না হয়ে থাকলে, বেফাকের দস্তুরুল মাদারিস-এর বিধান মুতাবিক গঠনতন্ত্র তৈরি করে জমা দিতে হবে।
০৫. ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনারের সার্টিফিকেট-এর ফটোকপি।
০৬. মাদরাসার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
০৭. সরকার অনুমোদিত অডিট কোম্পানী দ্বারা মাদরাসার হিসাব অডিট হয়ে থাকলে এর কপিও বেফাকের অফিসে জমা দিতে হবে। অন্যথা মাদরাসা কমিটির অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তবে প্রতি বছর সরকার কর্তৃক অনুমোদিত চার্টার্ড একাউন্টেন্টস্ কোং দ্বারা মাদরাসার স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তি অডিট করিয়ে নিতে হবে। মাদরাসার স্বার্থে এটা অপরিহার্য। উপরোক্ত এক নং-এর আওতায় বর্ণিত ৯ প্রকার ফরম-এর সঙ্গে কমিটির রেজুলেশন, হিসাবের অডিট রিপোর্ট, ইউ.পি চেয়ারম্যান/মিউনিসিপ্যাালিটি বা পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনারের সার্টিফিকেটসহ এ মুহুর্তে উপরোক্ত কাগজপত্র এবং গঠনতন্ত্র, মাদরাসার পরিচিতি ও ফিসমূহ জমা দিতে হবে।
০৮. এ সব বিষয়ের এক এক কপি মাদরাসার দফতরে অবশ্যই জমা রাখতে হবে। আর যা মঞ্জুর করিয়ে নিবেন, তা-ও হিফাযতে রাখতে হবে। আর যা মঞ্জুর করিয়ে নিবেন, তা-ও হিফাযতে রাখতে হবে।
০৯. মাদরাসার নামে দানকৃত/ওয়াকফকৃত/ক্রয়কৃত সম্পত্তির দলিলের ফটোকপি।
দুই : যা যা পড়া, জানা, সংরক্ষণ করা এবং যা যা কার্যকর করা খুবই প্রয়োজনঃ
(১) বেফাক-এর রেজিষ্ট্রেশনের নিয়মাবলী ও শর্তাবলী।
(২) বার্ষিক ইশতিহার
(৩) নেছাবনামা : শিশু শ্রেণী হতে ৮ম শ্রেণী
(৪) নেছাবনামা : ৯ম শ্রেণী হতে ১৬শ শ্রেণী
(৫) পরীক্ষার নেছাব : ১ পাতা
(৬) দস্তুরুল মাদারিস
(৭) মাদরাসার হিসাব নির্দেশিকা
(৮) ভাউচার লেখার পদ্ধতি ১ পাতা
(৯) বেফাক-এর পরিচিতি
৯. আর ‘হিফ্য ছাত্রদের তথ্য বই’-এটি ক্রয়ের জন্য হিফয ছাত্রদেরকে উৎসাহিত করতে হবে ও তা গুরুত্বের সাথে পূরণ করতে হবে।
১০. বেফাক-এর অফিসে উপরোক্ত কাগজপত্র জমা হবার পর অনুর্ধ এক মাসের মধ্যে মাদরাসা পরিদর্শন করা হবে। পরিদর্শনের রিপোর্টের ভিত্তিতে মাদরাসা ইলহাক করা হবে। পরিদর্শন ব্যয় মাদরাসাকে বহন করতে হবে।
১১. দস্তুরুল মাদারিস-এর আঙ্গিকে মাদরাসার জন্য একটি দস্তুর এবং চাকুরী-বিধি, শিক্ষকদের আচরণ বিধি ও বেতন স্কেল প্রণয়ন করে-এর অনুমোদনের জন্য বেফাক দফতরে ২ কপি জমা দিতে হবে অনুর্ধ ছয় মাসের মধ্যে।
যে সব মাদরাসা বেফাক-এর অন্তর্ভূক্ত করা যাবেঃ
(১) আদর্শ ফুরকানিয়া মাদরাসা, (কওমী মকতব, নূরানী ও নাদিয়া মকতব),
(২) প্রাইমারী (ইবতিদাইয়্যাহ) মাদরাসা,
(৩) কওমী কিন্ডার গার্টেন মাদরাসা
(৪) তাহফীযুল কুরআন (হাফেযিয়া) মাদরাসা,
(৫) শর্ট কোর্সের মাদরাসা,
(৬) ইলমুত তাজবীদ ওয়াল কিরায়াত-এর মাদরাসা,
(৭) দরসে নেযামী মাদরাসা (পুরুষ) যে কোন স্তরের,
(৮) বালিকা ও মহিলা মাদরাসা যে কোন স্তরের
মাদরাসা পরিদর্শনঃ
১২. বেফাক-এর পক্ষ হতে প্রতি বছর কমপক্ষে একবার মাদরাসা পরিদর্শন করিয়ে নিতে হবে এবং প্রতি বছর একবার সরকার অনুমোদিত চার্টার্ড একাউন্টেন্ট কোম্পানী দ্বারা মাদরাসার যাবতীয় সম্পত্তি ও হিসাব অডিট করিয়ে নিতে হবে এবং উহার রিপোর্টও বেফাক দফতরে জমা দিতে হবে।
উপরোক্ত নিয়মাবলী এবং নিম্নোক্ত ২৮ দফা শর্তাবলী পূরণ হলে মাদরাসাকে মঞ্জুরী দেয়া হবে এবং মঞ্জুরীপত্র প্রদান করা হবে।
কওমী প্রাইমারী ও দরসে নেযামীকে বেফাকভুক্ত করণের শর্তাবলীঃ
০১. দূরত্ব ঃ
এক মাদরাসা হতে নিকটবর্তী অন্য আর এক মাদরাসার মাঝে এতটুকু দূরত্ব থাকতে হবে, যাতে একটি মাদরাসার কারণে অন্য মাদরাসার কোন প্রকার ক্ষতি সাধিত না হয়। অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী মাদরাসার মর্যাদা ক্ষুন্ন না হয় বা সুনাম নষ্ট না হয়, দৃষ্টিকটু ও আপত্তিকর না হয়, জনগণের উপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি না পায়, জায়গীর নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সমাজে এখতেলাফ/বিতর্ক/সংঘাত জন্ম না দেয়, তদুপরী নিকটবর্তী স্থানে আর একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন আছে কি না, তা পূর্বােহ্নই যথাযথভাবে বিবেচনা করতে হবে।
বিদ্রঃ তবে মসজিদ কেন্দ্রিক মকতব প্রতিটি মসজিদেই থাকতে হবে/প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
০২. মাদরাসার এহাতার ভূমির পরিমাণঃ
প্রতিটি মাদরাসা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবার জন্য প্রয়োজন পরিমাণ নিজস্ব জায়গা থাকতে হবে। অর্থাৎ মাদরাসার অফিস, মেহমানখানা, কুতুবখানা ও দারুল মুতালাআ, দরসগাহ, আবাসিক ব্যবস্থাপনা, পাকঘর, খাওয়ার ঘর, উযূ, গোসল, ইস্তিঞ্জা ও নামায আদায়ের জন্য মসজিদ, শিশুদের খেলা-ধূলার মাঠ এবং মাদরাসার গুদাম ঘর ইত্যাদির নিমিত্ত প্রয়োজন পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভাড়ার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা ইলহাকের উপযুক্ত নয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদী ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনাধীন ভাড়ার বাড়ীর মাদরাসা অস্থায়ীভাবে ইলহাক করা যেতে পারে।
০৩. গৃহ ব্যবস্থা ঃ
দুই নম্বরে বর্ণিত বিষয়গুলোর নিমিত্ত যেমন জায়গা দরকার, তেমনিভাবে পর্যাপ্ত গৃহের ব্যবস্থা থাকতে হবে। গৃহসমূহ স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।
০৪. ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ঃ
কোন জামাআতে ছাত্র/ছাত্রী না থাকলে তার উপরের জামাআতে ইলহাক করা হয় না। প্রতিটি শ্রেণীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ছাত্র/ছাত্রী না থাকলে লেখাপড়ার পরিবেশ গড়ে উঠে না। দরসের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের মন বসে না, শিক্ষকদের মনেও আনন্দ আসে না, মেধার বিকাশ ঘটান যায় না। তদুপরি অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পায়। এ কারণে প্রতিটি শ্রেণীতে কমপক্ষে নিম্ন সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী থাকতে হবে।
কওমী প্রাইমারী/ইবতিদাইয়্যাহ
শ্রেণী | গ্রামে | শহরে | শ্রেণী | গ্রামে | শহরে |
---|---|---|---|---|---|
১ম শ্রেণী | ৩০ জন | ৪০ জন | ২য় শ্রেণী | ২৫ জন | ৩৫ জন |
৩য় শ্রেণী | ২০ জন | ৩০ জন | ৪র্থ শ্রেণী | ১৫ জন | ২০ জন |
৫ম শ্রেণী | ১০ জন | ২০ জন |
মারহালাতুল মুতাওয়াস্সিতাহ
শ্রেণী | গ্রামে | শহরে | শ্রেণী | গ্রামে | শহরে |
---|---|---|---|---|---|
৬ষ্ঠ শ্রেণী | ২৫ জন | ৩০ জন | ৭ম শ্রেণী | ২০ জন | ২৫ জন |
৩য় শ্রেণী | ২০ জন | ৩০ জন | ৪র্থ শ্রেণী | ১৫ জন | ২০ জন |
মারহালাতুস সানাবিয়া আম্মাহ্
শ্রেণী | গ্রামে | শহরে | শ্রেণী | গ্রামে | শহরে |
---|---|---|---|---|---|
৯ম শ্রেণী | ১০ জন | ১৫ জন | ১০ম শ্রেণী | ১০ জন | ১৫ জন |
মারহালাতুস সানাবিয়া উল্ইয়া
শ্রেণী | গ্রামে | শহরে | শ্রেণী | গ্রামে | শহরে |
---|---|---|---|---|---|
১১তম শ্রেণী | ১০ জন | ১৫ জন | ১২তম শ্রেণী | ১০ জন | ১৫ জন |
মারহালাতুল ফযীলাত
শ্রেণী | গ্রামে | শহরে | শ্রেণী | গ্রামে | শহরে |
---|---|---|---|---|---|
১৩তম শ্রেণী | ১০ জন | ২০ জন | ১৪তম শ্রেণী | ১০ জন | ২০ জন |
মারহালাতুত তাকমীল
শ্রেণী | গ্রামে | শহরে | শ্রেণী | গ্রামে | শহরে |
---|---|---|---|---|---|
১৫তম শ্রেণী | ১৫ জন | ৩০ জন | ১৬তম শ্রেণী | ২৫ জন | ৩০ জন |
বিদ্রঃ কোন শ্রেণীতে ৩০ জনের উর্ধ্বে ছাত্র-ছাত্রী হলে জামাআতকে বিভক্ত করে নিতে হবে।
০৫. মোহতামেম সাহেবের যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ঃ
বিঃ দ্রঃ মারহালা হিসেবে মোহতামেম সাহেবের যোগ্যতা ও দক্ষতা ভিন্ন ভিন্ন হবে।
ক্রমিক | মারহালা | শিক্ষাগত যোগ্যতা | দক্ষতা | অভিজ্ঞতা |
---|---|---|---|---|
০১ | তাকমীল
(দাওরায়ে হাদীস) |
উল্লেখযোগ্য মাদরাসা
হতে সুনামের সাথে দাওরায়ে হাদীস থেকে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ |
বুখারী শরীফ
পড়াবার দক্ষতা থাকতে হবে। |
৫ বছর তা’লীম
দানের অভিজ্ঞতার পর দায়িত্বভার গ্রহণ |
০২ | ফযীলাত
(মিশকাত শরীফ) |
উল্লেখযোগ্য মাদরাসা
হতে সুনামের সাথে দাওরায়ে হাদীস থেকে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ ও তাকমীল উত্তীর্ণ |
বুখারী শরীফ
পড়াবার দক্ষতা |
৫ বছর তা’লীম দানের অভিজ্ঞতার পর দায়িত্বভার গ্রহণ |
০৩ | সানাবিয়া উল্ইয়া | কমপক্ষে ফযীলাত
মারহালা হতে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ ও তাকমীল উত্তীর্ণ |
হাদীসের
কিতাব/হিদায়া পড়াবার দক্ষতা |
৫ বছর তা’লীম
দানের অভিজ্ঞতার পর দায়িত্বভার গ্রহণ |
০৪ | সানাবিয়া আম্মাহ | কমপক্ষে ফযীলাত
মারহালা হতে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ ও তাকমীল পাস |
হাদীসের কিতাব/ হিদায়া (ফিকহ) পড়াবার দক্ষতা |
৫ বছর তা’লীম
দানের অভিজ্ঞতার |
০৫ | মুতাওয়াস্সিতাহ | কমপক্ষে ফযীলাত
মারহালা হতে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ ও তাকমীল পাস |
শরহেজামী/কাফিয়া
/নূরুল আনওয়ার পড়াবার দক্ষতা |
৩ বছরের অভিজ্ঞতার পর দায়িত্বভার গ্রহণ |
০৬ | ইবতিদাইয়্যাহ
(প্রাইমারী) |
কমপক্ষে সানাবিয়া
উল্ইয়া হতে ১ম বিভাগে পাস |
হিদায়াতুন নাহবে
পড়াবার দক্ষতা থাকতে হবে। |
৩ বছরের অভিজ্ঞতার পর দায়িত্বভার গ্রহণ |
০৭ | হিফয | ৩০ পারার পাক্কা হাফেজ এবং ফযীলাত ডিগ্রী পাস উত্তম |
৩ বছরের
অভিজ্ঞতার পর দায়িত্বভার গ্রহণ |
|
০৮ | ক্বিরায়াত | কমপক্ষে সানাবিয়া আম্মাহ পাস এবং ক্বিরায়াতের ডিগ্রী পাস |
৩ বছরের অভিজ্ঞতার পর এ মারহালার মাদরাসার দায়িত্ব ভার গ্রহণ |
০৬. শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী সংখ্যাঃ
- অনুর্ধ প্রতি পনেরজন হিফযের ছাত্রের জন্য একজন উস্তাদ থাকতে হবে।
- ইলমুত তাজবীদ ওয়াল কিরায়াতের ২০ জন ছাত্রের জন্য একজন উস্তাদ থাকতে হবে।
- অনাবাসিক প্রাইমারীর (৫ম শ্রেণী পর্যন্ত) ক্ষেত্রে উস্তাদ ৬ জন ও কর্মচারী ১জন। আর আবাসিক প্রাইমারীর জন্য ৮ জন
- উস্তাদ থাকতে হবে।
- অনাবাসিক মুতাওয়াসসিতার জন্য ১১ জন ও আবাসিক-এর জন্য ১৪ জন উস্তাদ থাকতে হবে।
- সানাবিয়া আম্মাহ অনাবাসিকের জন্য ১৪ জন ও আবাসিক-এর জন্য ১৭ জন উস্তাদ থাকতে হবে।
- সানাবিয়া উল্ইয়া অনাবাসিকের জন্য ১৫ জন ও আবাসিক-এর জন্য ১৯ জন উস্তাদ থাকতে হবে।
- ফযীলাত স্তরের অনাবাসিকের জন্য ১৯ জন ও আবাসিক-এর জন্য ২৩ জন উস্তাদ থাকতে হবে।
- তাকমীল স্তরের অনাবাসিকের জন্য ২২ জন ও আবাসিক-এর জন্য ২৭ জন উস্তাদ থাকতে হবে।
- তা ছাড়া প্রয়োজন সংখ্যক কর্মচারী অর্থাৎ হিসাব রক্ষক, কেরাণী, পিয়ন, দারোয়ান ও খাদেম থাকতে হবে।
০৭. শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাঃ
- প্রতিজন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা :
- প্রাইমারী স্তরের মাদরাসার জন্য প্রতিজন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে কমপক্ষে সানাবিয়া উল্ইয়া উত্তীর্ণ হতে হবে। আর প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকাকে কমপক্ষে ফযীলাত মারহালায় উত্তীর্ণ হতে হবে, তাকমীল হলে ভাল হয়।
- মকতবের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে নূরানী/নাদিয়া/বেফাকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে।
- ১জন শিক্ষক/শিক্ষিকা চরিত্র গঠনের জন্য থাকতে হবে। ইসলামী তাহযীব, আকাইদ, আমল-আখলাক- এর বিষয়গুলো পড়ান ও ছাত্র-ছাত্রীদের চরিত্র গঠন করাই হবে এ শিক্ষক/শিক্ষিকার মূল দায়িত্ব।
মুতাওয়াসসিতাহ স্তরের জন্যঃ
- শিক্ষক/শিক্ষিকাকে কমপক্ষে ফযীলত মারহালায় উত্তীর্ণ হতে হবে, তাকমীল হলে ভাল হয়।
- প্রাইমারীর ক্বারী/ক্বারীয়াহ এবং প্রাইমারীর চরিত্র গঠনের শিক্ষক/শিক্ষিকা মুতাওয়াসসিতাহ্তেও দায়িত্ব পালন করবেন।
- সানাবিয়া উল্ইয়ার সকল শিক্ষক/শিক্ষিকাকে দাওরায়ে হাদীস উত্তীর্ণ হতে হবে। এ স্তরে একজন শিক্ষক/শিক্ষিকাকে চরিত্র গঠনের জন্য থাকতে হবে।
- ফযীলাত স্তর এবং দাওরায়ে হাদীসের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাকে দাওরায়ে হাদীস স্তর উত্তীর্ণ হতে হবে।
- এ স্তরদ্বয়েও ১জন শিক্ষক/শিক্ষিকা চরিত্র গঠনের জন্য থাকতে হবে।
- শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
- অতএব, প্রতিজন শিক্ষক/শিক্ষিকাকে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে।
- অতি উত্তম হবে নিয়োগের সময় বাছাই করে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক/শিক্ষিকাদের নিয়োগ দেয়া। কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক/শিক্ষিকাকে নিয়োগ দেয়া আবশ্যক।
- প্রতিজন শিক্ষক/শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। সেমতে নিয়োগের সময় প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং পালাক্রমে সকল শিক্ষক/শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করে নিতে হবে।
- ছেলে ও পুরুষদের মাদরাসায় কোন মহিলা শিক্ষিকা থাকতে পারবে না।
- বালিকা ও মহিলা মাদরাসায় কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ মহিলা শিক্ষিকা থাকতে হবে।
- প্রাইমারী স্তরের বালিকা মাদরাসার মোহতামেম সাহেব ব্যতীত সকলকেই মহিলা শিক্ষিকা হতে হবে।
- মহিলা মাদরাসার সকল স্তরের মোহতামেমকে পুরুষ হতে হবে এবং অনুর্ধ এক তৃতীয়াংশ শিক্ষক পুরষ হতে পারবে। অবশ্য অভ্যন্তরের তদারকীর জন্য মোহতামেম সাহেবের স্ত্রী বা নিকট আত্মীয়া কোন মহিলা শিক্ষিকা থাকতে হবে।
(৮) শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ দান পদ্ধতিঃ
মাদরাসার সিলেবাসভুক্ত বিষয় ও ভাষাসহ মোট সংখ্যা ২৪টি।
অতএব, শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ দানের সময় বিষয়গুলো সামনে রেখে বাছাই করে শিক্ষক/শিক্ষিকা রাখতে হবে। যাতে প্রতিটি বিষয়ের দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক/শিক্ষিকা সংগৃহীত হতে পারে।
(৯) মাদরাসার পাঠ্য বিষয়সমূহ হচ্ছেঃ
১. তিলাওয়াতঃ তাজবীদ মশকসহ। (এর জন্য স্বতন্ত্র ক্বারী/ক্বারিয়াহ থাকতে হবে বাধ্যতামুলক ভাবে)
২. তাযকিয়াহ্ঃ আকাইদ ও কালাম এবং আমল ও আখলাক গঠনের জন্য স্বতন্ত্র উস্তাদ থাকতে হবে বাধ্যতামুলক ভাবে।
৩. তাফসীর, উছুলে তাফসীর ও উলূমুল কুরআন।
৪. ফিক্হ, উছুলে ফিক্হ ও ফরাইয
৫. হাদীস, উছুলে হাদীস ও উলূমুল হাদীস
৬. আরবী ভাষা ঃ সাহিত্য ও ব্যাকরণ ঃ নাহব, ছরফ এবং রচনা, বালাগাত ও আরূয,
৭. তাসাউফ ও দর্শন
৮. ইসলামের অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান, গার্হস্থ্য (পারিবারিক) বিজ্ঞান ও পৌর বিজ্ঞান,
৯. ইতিহাস ও সীরাত ঃ ইসলামের ইতিহাস ও মুসলিম রাজা-বাদশা ও দেশের ইতিহাস এবং সীরাতুন্নবী
১০. ভূগোল ও ইসলামী ভূগোল
১১. বাংলা ও ব্যাকরণ-রচনাসহ
১২. ইংরেজী ও গ্রামার
১৩. উর্দূ ও কাওয়ায়েদে উর্দূ
১৪. ফারসী ও কাওয়ায়েদে ফার্সী
১৫. গণিত, জ্যামিতি ও আল জাবরা
১৬. সাধারণ জ্ঞান-বিজ্ঞান
১৭. মানতিক (তর্কশাস্ত্র)
১৮. দর্শন (ইসলামী দর্শন ও গ্রীক দর্শন)
১৯. জ্যোতিঃর্বিজ্ঞান
২০. লেখা শিক্ষা দান ৫টি ভাষায়। মোট ৪১টি বিষয়।
০৯. সম্পত্তি ও টাকা পয়সার হিসাবের অডিট :
প্রতি বছর নিয়মিতভাবে মাদরাসার স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তির হিসাব সরকার কর্তৃক অনুমোদিত চার্টার্ড একাউন্টেন্টস্ কোং দ্বারা অডিট করিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতি বছর মাদরাসা পরিদর্শনের সময় অডিট রিপোর্ট-এর ফটোকপি বেফাককে প্রদান করতে হবে।
১০. দরসগাহ :
প্রতিটি মাদরাসায় দরসগাহ আলাদা থাকতে হবে এবং ছাত্রাবাসও আলাদা থাকতে হবে। দরসগাহকে আবাসিক কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। দরসগাহের জন্য তেপায়া, ব্লাকবোর্ড থাকতে হবে। ম্যাট/মাদুর-এর বিছানা থাকতে হবে।
১১. যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা :
যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা উন্নত হতে হবে। যাতায়াত, চলাফেরা এবং ডাক ও পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হতে হবে। নিকটে চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। মাদরাসার অদূরে মাদরাসার নিজস্ব একটি মার্কেট/মাদরাসা মার্কেট থাকতে হবে। এতে থাকবে ঃ কতুবখানা, কাপড়-চোপড় তথা জামা, পাজামা, লুঙ্গী, পাগড়ী, রুমাল, টুপী, বোরকা, ওড়না, ছাতা, তাসবীহ, মিসওয়াক, সুরমা, আতর ইত্যাদি। এ ছাড়া দর্জী ও জুতার দোকান এবং একটা হোটেলও থাকতে হবে।
১২. অফিস কক্ষ ও আসবাব পত্র :
মাদরাসার অফিসের জন্য মান সম্মত একটি আলাদা কামরা থাকতে হবে এবং প্রয়োজন পরিমাণ ডেস্ক, চেয়ার, টেবিল, আলমারী ও বসার ব্যবস্থা এবং র্যাক, একটি করে গ্লোব, ওয়াল ম্যাপ, মানচিত্র বই এবং ঘণ্টা বাজাবার জন্য ১টি বেল থাকতে হবে।
১৩. গ্রন্থাগার :
প্রতিটি মাদরাসার দরসের জন্য, মুতালাআর জন্য, গবেষণার জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর পর্যাপ্ত বই-কিতাব, পত্র-পত্রিকা ও শিশু সাহিত্য সম্বলিত গ্রন্থাগার ও পাঠাগার থাকতে হবে। এর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন সার্বক্ষনিক নাযেমে কুতুবখানা (লাইব্রেরিয়ান) থাকতে হবে। বই-কিতাব সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন সংখ্যক আলমারী, র্যাক ও খাতাপত্র থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় রেজিষ্টার বহি থাকতে হবে। মুতাআলা করার জন্য স্থানের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং প্রয়োজন সংখ্যক তেপায়া এবং ছাত্রদের জন্য স্বতন্ত্র লাইব্রেরীও থাকতে হবে।
১৪. স্বাস্থ্য চর্চা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা :
ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য চর্চার জন্য বৈধ খেলা-ধুলা, ব্যায়াম এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি মাদরাসায় একজন ডাক্তার নির্ধারিত থাকতে হবে, যিনি সপ্তাহে একদিন মাদরাসার রোগী দেখবেন, ছাত্রদের স্বাস্থ্য চেকআপ করবেন।
১৫. স্যানিটারী ব্যবস্থাপনা :
ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী ও মেহমানদের জন্য পর্যাপ্ত স্যানিটারী ব্যবস্থা ও ঢিলা- কুলুখের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতি কুড়িজনের জন্য একটা করে স্যানিটারী পায়খানা থাকতে হবে। এ ছাড়া উযূ, গোসল, কাপড়-চোপড় ধৌত করার ও পানীয় পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। উযূ, গোসল ও ইস্তিঞ্জার জন্য আলাদা-ব্যবস্থা থাকতে হবে। এগুলো এক কক্ষের মধ্যে হতে পারবে না। ঢিলা-কুলুখের পরিবর্তে টয়লেট পেপার ব্যবহার করা উত্তম।
১৬. নামাযের ব্যবস্থাপনা :
প্রতিটি মাদরাসায় মাদরাসার নিজস্ব মসজিদ থাকতে হবে। মাদরাসার অধীনে এ মসজিদ পরিচালিত হবে। নামাযের সময় বাইরের লোকদের নামায আদায়ের সুযোগ থাকতে হবে। নিকটবর্তী মসজিদে নামায আদায় করা যাবে। তবে নিজস্ব মসজিদ থাকা বাঞ্ছনীয়।
১৭. আবাসিক ব্যবস্থাপনা :
প্রতিটি মাদরাসায় আবাসিক ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার ও খাওয়ার জন্য স্বতন্ত্র গৃহের, উযূ, গোছল, কাপড়-চোপড় ধৌত করার ও পানীয় পানি এবং ঢিলা-কুলুখ ইত্যাদির জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা থাকতে হবে। একই কক্ষে দরসগাহ ও আবাসিক ব্যবস্থাপনা হতে পারবে না।
নিকটবর্তী এলাকার ছাত্রদের জন্য খাওয়ার সময় ব্যতীত সারা দিন মাদরাসায় থাকার ও রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আবাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাদরাসার উচ্চ স্তরের একজন শিক্ষককে এর দায়িত্বশীল (নাযেমে দারুল ইকামাহ) বানাতে হবে। তিনি সার্বক্ষনিক হবেন। রাত্রি বেলায় মাদরাসায় অবস্থান করবেন। ছাত্রদের থাকার জন্য ফ্লোরের উপরে তক্তা বিছিয়ে দিতে হবে। ফ্লোরের ঠান্ডায় থাকতে দেয়া যাবে না।
১৮. দায়িত্বশীলের অবস্থান :
মাদরাসার মোহতামেম, নায়েবে মোহতামেম, নাযেমে তা’লীম ও তারবিয়াত, নাযেমে ইমতিহান, নাযেমে দারুল ইকামাহ্, নাযেমে কুতুবখানাগণ হবেন সার্বক্ষণিক। তাই, তাদেরকে সার্বক্ষণিকভাবে মাদরাসায় অবস্থান করতে হবে। এঁরা জুমু’আর খতীব ব্যতীত বাইরের অন্য কোন দায়িত্ব (যেমন-
ইমামতি, অন্য কোন মাদরাসায় পড়ান, টিউশনি করা, ওয়াজের পেশা) পালন করতে পারবেন না। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের দেখা-শুনা করা, পড়াশুনায় সহযোগিতা দান ও তদারকী করা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রয়োজন সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাদরাসায় সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করতে হবে। মাদরাসার পরিবেশকে দ্বীনি তা’লীমের পরিবেশে এবং দ্বীনের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
১৯. মাদরাসার দরসগাহ :
আবাসিক কামরা, অফিস কক্ষ, বারান্দা, উঠান, পেশাবখানা, পায়খানা, উযূখানা, গোছলখানা ও মসজিদ/নামাযগৃহ প্রত্যহ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পরিচ্ছন্নতার জন্য বেতনভোগী ঝাড়–দার রাখতে হবে। আদৌ ময়লা হতে দেয়া যাবে না। কাগজের টুকরা/ময়লা ফেলার জন্য ঝুড়ির ব্যবস্থা, থুথ ফেলার জন্য ডাষ্টবিনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২০. বেফাক কর্তৃক নির্ধারিত পূণাঙ্গ সিলেবাস :
পরীক্ষার সিলেবাস, তরীকায়ে তা’লীম, তরীকায়ে তারবিয়াত ও তাযকিয়াহ (চরিত্র গঠন ও লালন), পরীক্ষা পদ্ধতি, দাওরা ও মিশকাত জামাআতের তাকরীর নির্ধারণ, মাকাদীরে আসবাক প্রভৃতি বেফাক অনুকরণে অনুসরণ করতে হবে। বেফাক কর্তৃক নির্ধারিত বই-কিতাব পাঠ্য করতে হবে। যথারীতি তাকরার, মুতালাআ, মুনাযারা, সাপ্তাহিক সভা ও বাংলাভাষা চর্চার ব্যবস্থা ও বার্ষিক স্মরণিকা প্রকাশ করতে হবে।
২১. পরীক্ষা :
প্রতি বছর ৩টি করে পরীক্ষা নিতে হবে। ১ম সাময়িক, ২য় সাময়িক এবং সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে হবে। প্রাইমারীতে মাসিক পরীক্ষা গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। কেন্দ্রীয় পরীক্ষার জামাআতগুলোর সমাপনী পরীক্ষা বেফাকে দিতে হবে। এটাই কেন্দ্রীয় পরীক্ষা।
২২. বার্ষিক নবায়ন ফি প্রদান :
প্রতি বছর বছরের শুরুতে নবায়ন ফি দিয়ে মাদরাসার রেজিষ্ট্রেশন নবায়ন করতে হবে।
২৩. মাদরাসার শ্রেণী/জামাআত বৃদ্ধি করণ :
যখনই শ্রেণী/জামাআত বৃদ্ধির চিন্তা করতে হবে, তখনই প্রথমে যে বিষয়গুলো দেখতে হবে, তা হলো-একটি শ্রেণী/জামাআত বৃদ্ধি করতে হলে কমপক্ষে একজন শিক্ষক বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিটি ক্লাসরুম/দরসগাহের জন্য একটি করে কামরা প্রয়োজন হবে। কিছু তেপায়া প্রয়োজন হবে। কিতাব ও তার শরাহ সংগ্রহ করতে হবে। ছাত্র ভর্তি করতে হবে। ছাত্রদের ও উস্তাদদের থাকা, খাওয়া ও আবাসিকের ব্যবস্থা করতে হবে। যখন এগুলো আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হবে, তখনই একটি শ্রেণী খোলা উচিত হবে। বিষয়গুলো বিবেচনা করে কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথা অব্যবস্থপনার মধ্য দিয়ে শ্রেণী বৃদ্ধি করা হলে তা কখনও সফলতা বয়ে আনতে পারবে না। অদক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অযোগ্য ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে দ্বীনের কোন কল্যাণ বয়ে আনা যাবে না। এটা শুধু জনগণের অর্থের অপচয় বই কিছুই নয়। কাজেই ইহা পরিহার করা বাঞ্ছনীয়।
২৪. মারহালা পরিবর্তন করতে হলে :
বছরের শুরুতে মারহালা পরিবর্তন ফরম পূরণ করে অফিসে জমা দিতে হবে। উপরের দিকে উন্নতি করতে হলে নির্ধারিত ফি প্রদান করে উন্নিত করতে হবে। পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে মাদরাসা
কমিটির রেজুলেশন থাকতে হবে এবং অফিস কর্তৃক প্রদত্ত মারহালা পরিবর্তন ফরমের সঙ্গে তা জুড়ে দিতে হবে। মধ্যবর্তী কোন জামাআতে ছাত্র/ছাত্রী না থাকলে কোন অবস্থাতেই পরবর্তী মারহালায় ইলহাক পরিবর্তন করা যাবে না।
২৫. মাদরাসার বার্ষিক রিপোর্টঃ
প্রতি বছর মাদরাসার বার্ষিক রিপোর্ট প্রণয়ন ও প্রচার করতে হবে।
এ রিপোর্টে থাকবেঃ
(ক) মাদরাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, আদর্শ ও চিন্তাধারা এবং মাদরাসা নামক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
(খ) শিক্ষার বর্তমান অবস্থা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের খিদমত সমূহ,
(গ) শ্রেণী সমূহ ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যাসহ
(ঘ) মোট শিক্ষক-শিক্ষিকা সংখ্যা
(ঙ) স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও বার্ষিক আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট,
(চ) কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল,
(ছ) ভবিষ্যত পরিকল্পনা, এ ছাড়া মাদরাসার ইতিহাস, অবদান ও ঐতিহ্য সম্বলিত বই প্রণয়ন, প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে।
২৬. উন্নয়ন পরিবেশ :
- মাদরাসার মধ্যে শিক্ষা-দীক্ষার এবং দ্বীনি কেন্দ্রের উন্নত পরিবেশ বিরাজমান থাকতে হবে।
- আবাসিক ব্যবস্থাপনায় ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবস্থানের জন্য উন্নত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- মাদরাসাকে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক- শিক্ষিকাদের উন্নত ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনার লালন কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে।
- মাদরাসাকে দ্বীন, দেশ ও জাতির আদর্শ কর্ণধার গড়ার উন্নত কারখানায় পরিণত করতে হবে।
- ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে মাদরাসার চাঁদা সংগ্রহ, দাওয়াত খাওয়া, মীলাদ পড়া, দান খয়রাত সংগ্রহ ও গ্রহণ প্রভৃতি হতে দূরে রাখতে হবে এবং উন্নত ধ্যান-ধারণা প্রদান করতে হবে।
- ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা ও প্রতিভা নির্ণয় করে মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে দ্বীন ও সমাজের কোন না কোন ক্ষেত্রের দিকপাল তৈরির মেহনত করতে হবে।
২৭. তাকরার ও পাঠ প্রস্তুতের ব্যবস্থাপনাঃ
প্রতিটি মাদরাসায় নিয়মিত তাকরার এবং পাঠ প্রস্তুত করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। এতদ নিমিত্ত্ব প্রয়োজন সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য রাত্রে মাদরাসায় অবস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
২৮. পাঠদান পদ্ধতিঃ
(ক) বর্ণনাভঙ্গী, জ্ঞান দান, জীবন গঠন ও ভবিষ্যত দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে চেতনাবোধ সৃষ্টিধর্মী হতে হবে।
(খ) পাঠদানের সাথে সাথে জ্ঞান আহরণ ও জীবন গঠনের প্রতি সদা উৎসাহ প্রদান করে আসতে হবে।
(গ) উন্নতমানের চারিত্রিক মাধুর্যে নিজকে বিকশিত করে আপন ব্যক্তিত্ব গঠনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
(ঘ) “সময় অমূল্য ধন” নীতি বাক্যটি কাজে লাগিয়ে প্রতিটি মুহুর্তকে মূল্যবান হিসেবে গণ্য করার অভ্যাস গড়ে তোলতে হবে।
(ঙ) মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে। মেধা নির্ণয় করে দিতে হবে। ভবিষ্যত কর্ম তৎপরতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
পরীক্ষা পদ্ধতি : ত্রয়মাসিক, ষান্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষা কেন্দ্রিক দরসের পরিমাণ (মাকাদীরে
আসবাক) নির্ধারণ করে নিতে ও নির্ধারিত পরিমাণ পাঠ পড়াতে হবে।
স্বতন্ত্র তাহফীযুল কুরআন মাদরাসা
বেফাকভুক্তির নিয়মাবলী ও শর্তাবলীঃ
১. প্রাইমারী ও দরসে নেজামী মাদরাসার বেফাকভুক্তির নিয়মাবলী ও শর্তাবলী অনুসরণ করতে হবে। তবে উহাতে বর্ণিত ৪নং-এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, একজন শিক্ষক/শিক্ষিকা অনুর্ধ ১৫জন ছাত্র/ছাত্রী পড়াতে পারবেন। তবে ১০ জন হওয়াই উত্তম।
২. ১৩নং এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, হিফযখানার ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান অর্জনের নিমিত্তে ছোট খাট একটা গ্রন্থাগার অবশ্যই থাকতে হবে।
৩. হিফযখানা অবশ্যই আবাসিক হতে হবে এবং শিক্ষক/শিক্ষিকাবৃন্দকেও আবাসিক হতে হবে।
৪. প্রতিজন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে হাফেয-হাফেযা ও আলেম-আলেমা হওয়া উত্তম। তবে প্রধান শিক্ষককে অবশ্যই হাফেয/হাফেযা ও আলেম/আলেমা হতে হবে এবং অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাকে হাফেয ও ১০ম শ্রেণী (জামাআতে শরহে জামী) উত্তীর্ণ হতে হবে।
৫. সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাকে অবশ্যই বিবাহিত-বিবাহিতা হতে হবে।
৬. ১০ বছরের উর্ধ্বের কোন নতুন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা যাবে না।
৭. অভিভাবকের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করতে হবে।
৮. হিফয ছাত্র-ছাত্রীদের প্রত্যেককে তথ্য বই ব্যবহার করাতে হবে।
শর্ট কোর্সের মাদরাসা
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যঃ
শর্টকোর্স মাদরাসার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য : সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত তথা অন্তত ১০ম মানে উত্তীর্ণদেরকে কওমী মাদরাসায় ভর্তি করত ধর্মীয় জ্ঞান দান করে খাঁটি মুসলমান এবং খাঁটি দেশ প্রেমিক, শিক্ষিত নাগরিক আলেম ও সমাজ সেবক হিসেবে তৈরী করা, শিক্ষক হিসেবে নহে।
এরা দেশ গঠন ও পরিচালনার কাজে যোগদান করে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে দেশ গঠন ও পরিচালনা করবে এবং ইসলামের দিকে দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে আসবে।
বেফাকভুক্তির নিয়মাবলী ও শর্তাবলীঃ
১. প্রাইমারী ও দরসে নেজামী মাদরাসার বেফাকভুক্তির নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে।
২. মঞ্জুরী দানের শর্তাবলী পূর্ণরূপে অনুসরণ করতে হবে।
৩. ৪নং-এর ব্যাখ্যাঃ প্রতিটি বর্ষে কমপক্ষে নিম্নবর্ণিত ছাত্র সংখ্যা থাকতে হবে।
ন্যুনতম ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারী সংখ্যা
ছাত্র সংখ্যা | শিক্ষক সংখ্যা | কর্মচারী সংখ্যা | ||
---|---|---|---|---|
বর্ষসমূহ | গ্রামে | শহরে | শিক্ষক সংখ্যা | কর্মচারী সংখ্যা |
১ম বর্ষ | ৩০ জন | ৪০ জন | ৩ জন | ২ জন |
২ম বর্ষ | ২৮ জন | ৩৫ জন | ২ জন | |
৩ম বর্ষ | ২৫ জন | ৩০ জন | ২ জন | |
৪ম বর্ষ | ২২ জন | ২৫ জন | ২ জন | |
৫ম বর্ষ | ১৮ জন | ২০ জন | ১ জন | |
৬ম বর্ষ | ১৫ জন | ১৮ জন | ২ জন | ১ জন |
স্টাফ সংখ্যা
ক্বারী সাহেব ১ জন
মাস্টার সাহেব ৩ জন
মাওলানা সাহেব ৭ জন
মোট শিক্ষক সংখ্যা ১১ জন
কর্মচারী সংখ্যা ৩ জন
মোট স্টাফ ১৪ জন।
০৪. এস.এস.সি পাশের নিচে কোন ছাত্র ভর্তি করা যাবে না। ভর্তির ব্যাপারে ফার্ষ্ট ডিভিশন (এ গ্রেড) প্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর পববর্তীতে এইচ.এস.সি ও বি,এ পরীক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে।
ইলমুত তাজবীদ ওয়াল ক্বিরায়াত মাদরাসা-এর
বেফাকভুক্তির নিয়মাবলী ও শর্তাবলীঃ
০১. ইলমুত তাজবীদ ওয়াল কিরায়াত মাদরাসাকে বেফাকভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রাইমারী ও দরসে নিযামী মাদরাসার বেফাকভুক্তির নিয়মাবলী এবং মঞ্জুরী দানের শর্তাবলী অনুসরণ করতে হবে। তবে ৪নং এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, একজন উস্তাদ অনুর্ধ ২০ জন ছাত্র পড়াতে পারবেন।
০২. ইলমুত তাজবীদ ওয়াল ক্বিরায়াত বিভাগে ভর্তির জন্য শর্ত হচ্ছে ১০ম শ্রেণী তথা শরহে জামী জামাআত উত্তীর্ণ হতে হবে।
০৩. এদের মর্যাদা হবে ফযীলাত মারহালার সমমান।
০৪. অত্র কোর্স হচ্ছে স্বতন্ত্র ফন্নী শিক্ষা কোর্স এবং ইলমুত তাজবীদ ওয়াল ক্বিরায়াতের উচ্চ শিক্ষা কোর্স।
বালিকা ও মহিলা মাদরাসা
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যঃ
১. বালিকা ও মহিলা তথা মাতৃজাতির জন্য দ্বীনি ইলম শিক্ষা লাভের সাথে সাথে সন্তান ধারণ, লালন, গঠন, পরিচর্যা এবং পারিবারিক ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করা অবশ্য কর্তব্য। তাই, তাদের জন্য এ শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
২. মাতৃজাতিকে আদর্শ রমণী, আদর্শ গৃহিনী, আদর্শ মা ও আদর্শ শিক্ষিকা এবং আদর্শ দায়িয়াহ হিসেবে গড়ে তোলা।
৩. মাতৃজাতির নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মান উন্নয়ন ও সংরক্ষণে, দ্বীনের জ্ঞান বিতরণ ও বাস্তবায়নে মাদরাসা শিক্ষার বিকল্প উন্নত কোন ব্যবস্থা হতে পারে না। তাই, মাতৃজাতির মান উন্নয়ন ও সংরক্ষণের নিমিত্ত মাতৃজাতির প্রতিজন সদস্যাকে শিক্ষিত, ভদ্র, আদর্শ, দ্বীনদার রমণীরূপে গড়ে তোলা এবং নিরক্ষরতা, মূর্খতা, অপশিক্ষা, অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার হতে মুক্ত করা।
বালিকা ও মহিলা মাদরাসা বেফাকভুক্ত করণের নিয়মাবলী ও শর্তাবলীঃ
ছেলেদের মাদরাসা বেফাকভুক্ত করণের নিয়মাবলী এবং শর্তাবলী অনুসরণ করতে হবে। ছাত্রীদের আবাসিক ব্যবস্থাপনা, মাদরাসার ভর্তি, যাতায়াত ও যোগযোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আরো কিছু নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হবে। যথাঃ-
১. যথাযথ গার্জিয়ান ব্যতীত কোন ছাত্রী ভর্তি করা যাবে না।
২. নির্ধারিত বয়সের উর্ধ্বের কোন ছাত্রী ভর্তি করা যাবে না।
৩. বিবাহিতা ছাত্রী ভর্তি করা যাবে না।
৪. চাল-চলন, লেবাস-পোষাক শালীনতা মাফিক হতে হবে। অন্যথা ভর্তি করা যাবে না।
৫. পর্দার বিধানের প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। বিশেষভাবে বোরকা, হাতমুজা, পামুজা ব্যবহারের বিধান রাখতে হবে।
৬. প্রয়োজনে বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে পর্দা অনুসরণ করতে হবে।
৭. মেধাবী ও চরিত্রবতী ছাত্রী বাছাই করে ভর্তি করতে হবে।
৮. অবিবাহিত পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাবে না।
৯. উস্তাদদের অধিকাংশই মহিলা শিক্ষিকা হতে হবে।
১০. ছাত্রীদের শয়নগৃহের মধ্যেও শিক্ষিকার তত্ত্বাবধান থাকতে হবে।
১১. দিবা ও নৈশ উভয় সময়ে তথা সার্বক্ষনিক তত্ত্বাবধান ও পাহারাদারের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
১২. ভিতরে ছাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সার্বক্ষনিক একজন যোগ্য আলেমা তত্ত্বাবধায়িকা থাকতে হবে। তাঁকে মোহতামেমের স্ত্রী বা নিকটাত্মীয়া হওয়া বাঞ্ছনীয়।
১৩. প্রয়োজন সংখ্যক আয়া থাকতে হবে।
১৪. কাপড়-চোপড়, বোরকা ইত্যাদির জন্য ভিতরে বা নিকটে দর্জির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
১৫. চিকিৎসার নিমিত্ত দ্বীনদার মহিলা ডাক্তারের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
১৬. ছাত্রীদের আনা-নেয়ার জন্য গার্জিয়ানদের থেকে ২/৩ জন মাহরামের নাম, পরিচয় ও ছবি জমা দিতে হবে।
১৭. অনুমতি ব্যতীত বাইরের কোন মহিলা মাদরাসার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না।
১৮. অনুমতি দেয়ার সময় খুব ভালভাবে যাচাই-বাছাই করে অনুমতি দিতে হবে।
১৯. মেয়েদের বিবাহ-শাদীর বিষয়ে মাদরাসার কেহ কারোর সঙ্গে কোন যোগাযোগ বা কথা-বার্তা বলতে পারবেন না।
২০. ছাত্রীদের নামে আগত ও তাদের প্রদত্ত চিঠিপত্র নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
২১. ছাত্রীদের নিত্য নৈমিত্তিক চাহিদা যা না হলে নয় তা মাদরাসার তত্ত্বাবধানে পূরণ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২২. মাদরাসার ভিতরে বা নিকটে কোন শিক্ষকের/শিক্ষিকার কোন দোকান থাকতে পারবে না। থাকলে তা মাদরাসার পক্ষ হতে করতে হবে।
২৩. কোন ছাত্রীর সঙ্গে কোন শিক্ষক/শিক্ষিকা আলাদা কোন সম্পর্ক গড়ে তোলতে পারবে না।
২৪. মহিলা মাদরাসা সংক্রান্ত বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হবে।
২৫. অনাবাসিক মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা বাঞ্ছনীয়।
২৬. ছাত্রীদের নিকট কোন মোবাইল ফোন থাকতে পারবে না। এমনকি শিক্ষক-শিক্ষিকা দরসগাহে মোবাইল সাথে নিয়ে যেতে পারবেন না।
কওমী কিন্ডার গার্টেন মাদরাসা
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যঃ
- কিন্ডার গার্টেন পদ্ধতিতে কওমী প্রাইমারীর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন করা। অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদেরকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজন পরিমাণ ধর্মীয় শিক্ষা এবং ইসলামী চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা ও আদব- আখলাক শিক্ষা দান করা।
- কিন্ডার গার্টেন সিস্টেমে কওমী কিন্ডার গার্টেন মাদরাসা প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হল-শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন সাধন করা।
- কিন্ডার গার্টেনের প্রতি অভিভাবক মহলের একটা ঝোঁক সৃষ্টি হয়েছে। এ ঝোঁকটা কাজে লাগিয়ে আরো বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীকে ধর্মীয় শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা।
কওমী প্রাইমারীর উপকারিতাঃ
- কওমী প্রাইমারী ও কওমী কিন্ডার গার্টেন মাদরাসার সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে সাধারণ শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয়ে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বিত রূপ। এতে প্রাইমারী শিক্ষার সমমান যেমন রক্ষা করা হয়েছে, ঠিক তদ্রুপভাবে ধর্মীয় শিক্ষার মানও গুরুত্বসহ রক্ষা করা হয়েছে।
- পঞ্চম শ্রেণী সমাপ্তকারী এ শিশুদেরকে অভিভাবকবৃন্দ ইচ্ছে করলে কওমী মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণী বা হাইস্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অনায়াসে ভর্তি করাতে পারবেন।
- ধর্মীয় শিক্ষার মান এতটুকু দেয়া সম্ভব হবে যে, ৩০ পারা কুরআন শরীফ সহীশুদ্ধ তিলাওয়াত, ৩০তম পারাসহ সূরা ইয়াসীন মুখস্থ, প্রয়োজনীয় আকাইদ, মাসাইল, আদইয়ায়ে মাসনুনাহ, আ‘মাল-আখলাক প্রভৃতি শিক্ষা দেয়া সম্ভব হবে। অর্থাৎ একটি ইসলামী জীবন গঠনের ভিত রচনা করা সম্ভব হবে।
- কওমী কিন্ডার-গার্টেন মাদরাসা থেকেও কওমী প্রাইমারীর অনুরূপ সাধারণ শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া যাচ্ছে।
- এতে মুসলমান অভিভাবকদের আকর্ষণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেফাকভুক্তির নিয়মাবলী ও শর্তাবলীঃ
কওমী প্রাইমারী বেফাকভুক্তি করণের নিয়মাবলীর অনুরূপ।
আদর্শ কুরআনিয়া মাদরাসা
পরিচিতিঃ মসজিদ কেন্দ্রিক ফুরকানিয়া/কুরআনিয়া শিক্ষাকে উন্নত করে উহার নামকরণ করা হয়েছে আদর্শ কুরআনিয়া মাদরাসা। এখানে ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাধারণ শিক্ষা যোগ করা হয়েছে এবং এ শিক্ষার গুণগত মানও উন্নত করা হয়েছে।
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যঃ
- শিশুদেরকে উন্নতমানের ধর্মীয় শিক্ষা দান এবং তদসঙ্গে ২য় শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা দান করা,
- শিশুরা শুধু মকতব শিক্ষা লাভ করে যাতে ঝরে না পড়ে বরং তাদেরকে উচ্চ শিক্ষা লাভের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ প্রদান করা।
বেফাকভুক্ত করণ ও পরীক্ষা দানের সুযোগ দানঃ
আদর্শ ফুরকানিয়া/কুরআনিয়া মাদরাসাগুলোকে বেফাকভুক্ত করে ছাত্র-ছাত্রীদের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দানের ব্যবস্থা করা।
মাদরাসা প্রতিষ্ঠার নিয়ম
মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে সর্বপ্রথম বিবেচনা করতে হবেঃ
ক. এখানে কোন মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন আছে কি না ?
খ. যদি প্রয়োজন থাকে, তা হলে তা কোন স্তরের ?
গ. প্রয়োজন পরিমাণ জায়গা আছে কি না ?
ঘ. নিকটে কোন মসজিদ আছে কি না ?
ঙ. মসজিদ না থাকলে প্রথমেই একটি মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। মসজিদসহ মাদরাসার জায়গার পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
চ. প্রথম পর্যায়ে মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতাকে স্থানীয় আলেম-উলামা, ইমাম এবং সমাজের মুরব্বীগণের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে আলোচনা করে মাদরাসার প্রস্তাব উত্থাপন করতে হবে।
ছ. দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি সভা আহবান করে স্থানীয় গণ্যমান্য ও সর্ব সাধারণের সামনে উক্ত প্রস্তাব পেশ করে সর্বসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং তাদের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে।
জ. জনগণ সম্মত হলে স্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে প্রাথমিক কার্যাবলী সমাপ্ত করার পর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে হবে।
ঝ. কোন আল্লাহওয়ালা বুযুর্গ আলেমে দ্বীনের হাতে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে হবে।
ঞ. প্রথম পর্যায়ে ঃ কুরআনে কারীমের সহীশুদ্ধ তা’লীম চালু করতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উস্তাদ দ্বারা কুরআনে কারীমের তা’লীম চালু করতে হবে।
ট. দ্বিতীয় পর্যায়ে ঃ বয়স্ক শিক্ষা চালু করতে হবে।
ঠ. তৃতীয় পর্যায়ে ঃ কওমী প্রাইমারী চালু করতে হবে। যখন ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু হয়ে যাবে এবং সুদৃঢ় হবে, তখন হিফযখানা চালু করতে হবে। প্রাইমারী ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত চালু হবার পর ভিন্নভাবে মকতব শিক্ষার কোন প্রয়োজন থাকবে না। তখন ভিন্নভাবে পরিচালিত মকতব শিক্ষা বাদ দিতে হবে।
ড. চতুর্থ পর্যায়ে ঃ হিফযখানা চালু করতে হবে।
ঢ. পঞ্চম পর্যায়ে ঃ কওমী প্রাইমারী ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পৌঁছার এবং সুদৃঢ় হবার পর নিম্ন মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ-৮ম) স্তর চালু করা। পর্যায়ক্রমে এক এক শ্রেণী করে চালু করা উত্তম।
ণ. নিয়ম-নীতি অনুযায়ী শুরুতেই সাব্যস্ত করে নিতে হবে যে, এখানে কোন স্তরের মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা বাঞ্ছনীয়। তবে সাব্যস্তকৃত স্তর রাতারাতি চালু করা যাবে না। বরং পর্যায়ক্রমে বাড়াতে হবে এবং মজবুত করে এগিয়ে নিতে হবে।
এতদসঙ্গে অন্যান্য বিষয়গুলোও দেখতে হবে। যেমন-মসজিদ, জায়গা, ঘর-দরজা, আসবাবপত্র, মাসিক ব্যয়, ছাত্র, শিক্ষক, কিতাবপত্র, ফর্নিচার ও জায়গীর ইত্যাদি।(মাদরাসা রেজিষ্ট্রেশনের নিয়মাবলী ও শর্তাবলী অধ্যায়ে বর্ণিত নিয়মাবলী ও শর্তাবলীর ২/১টি বিষয় বাদে সবগুলো অনুসরণ করতে হবে)।
মাদরাসা প্রতিষ্ঠার নীতিমালা
প্রতিটি পাড়ায় পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মাণ করা এবং তদসংলগ্ন মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের চাহিদা। মাদরাসার নাম হবে প্রাইমারী (৫ম শ্রেণী)। আর কমপক্ষে ২য়/৩য় শ্রেণী পর্যন্ত। প্রতিটি ইউনিয়নে ১টা বা ২টা মাধ্যমিক স্তরের মাদরাসা, প্রতিটি উপজেলায় ১টা বা ২টা ডিগ্রী (ফযীলাত মারহালা) পর্যায়ের এবং জেলা শহরে একটি করে দাওরায়ে হাদীস স্তরের মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা।
যেহেতু প্রতিটি মাদরাসার জন্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, গৃহাদী, কিতাব-পত্র ইত্যাদির ব্যবস্থাসহ মাসিক ব্যয় নির্বাহ করা সবই নির্ভর করে জনগণের উপর। সে হিসেবে জনগণের উপর সাধ্যের অতীত কোন বোঝা চাপানো ঠিক নয় এবং যেহেতু জনগণের আর্থিক সহযোগিতা এবং শিক্ষকদের কুরবাণীর উপর নির্ভর করে কওমী মাদরাসা। তাই, গ্রহণযোগ্য পথ ও পন্থা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। মাদরাসায় পর্যাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয় না। ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহের চেষ্টাও করা হয় না। অতএব, মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধির চেষ্টা চালাতে হবে। দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্র-ছাত্রী স্থানীয় হতে হবে এবং এক-তৃতীয়াংশ ছাত্র-ছাত্রী বাইরের নিতেই হবে। অন্যথা মাদরাসার পরিবেশ তৈরি হবে না। ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধির জন্য ঘরে ঘরে গাশ্ত করতে হবে। ধর্মীয় জ্ঞান দানের গুরুত্ব ও উপকারিতা বুঝাতে হবে। কওমী মাদরাসায় পড়েও সাধারণ শিক্ষার দিকে যাওয়া যায়/ভর্তি হওয়া যায়, তাও বুঝাতে হবে। উল্লেখ্য যে, বেফাকের বর্তমান সিলেবাস ৮ম মান পর্যন্ত সমাজ ও দ্বীনী চাহিদা পূরণ করছে বিধায় সমাজে এর আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে।
কওমী প্রাইমারী মাদরাসা কি ও কেন
আমরা মুসলমান। আমাদের ও আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া ও শিক্ষা-দীক্ষা কি হওয়া কর্তব্য, কি হচ্ছে এবং কি করণীয়, তা ভেবে দেখা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। কিন্তু আমরা কি তা কখানো ভেবে দেখেছি ? সম্ভবত দেখি নাই। আমরা আমাদের সন্তানদের কিরূপ দেখতে চাচ্ছি, আর কিরূপ হচ্ছে তাও ভেবে দেখার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমরা তার প্রয়োজন মনে করি কি? সম্ভবত করি না।
আসুন! একবার ভেবে দেখি। আল্লাহ রব্বুল আলামীন সর্ব প্রথম কুরআনে কারীমের যে আয়াতসমূহ নাযিল করেন, তাতে তিনি নির্দেশ দেন, “পড়–ন (হে মুহাম্মাদ!) আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি (সব কিছু) সৃষ্টি করেছেন। (১) সৃষ্টি করেছেন তিনি মানব জাতিকে আলাক (জমাট রক্ত) থেকে। (২) পড়–ন (হে মুহাম্মাদ!) এবং আপনার প্রতিপালক অতি মহান। (৩) যিনি শিখিয়েছেন (মানব জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান) কলমের সাহায্যে (৪) শিখিয়েছেন তিনি মানব জাতিকে যা তারা (কখনও) জানত না।” (৫) (সূরা আলাক)।
প্রথম বাণীসমূহের প্রথম কথাটি হচ্ছে-“পড়–ন (হে মুহাম্মাদ!)” বাক্যটি আদেশ সূচক। এরদ্বারা মহানবী (সাঃ)-কে পড়ার অর্থাৎ জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারপর বলেছেন-“যিনি শিখিয়েছেন কলমের সাহায্যে।” এ কথাটি দ্বারা অত্যন্ত পরিস্কারভাবে প্রতিভাত হয় যে, সর্বশেষ উম্মাত-উম্মাতে মুহাম্মাদির প্রতিটি সদস্যকে পড়া ও লেখা উভয়ের সমন্বয়ে গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ পড়া ও লেখার মাধ্যমে শিক্ষিত ও জ্ঞানী করে তোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন- “ইলম অর্জন করা প্রতিজন মুসলমানের উপর ফরয, অবশ্য কর্তব্য।” মহানবী (সঃ) শুধু ইরশাদ করেই ক্ষান্ত হন নি বা আল্লাহর বাণী প্রচার করেই দায়িত্ব শেষ করেন নি বরং তিনি (সঃ) এর প্রয়োজনীয় সমুদয় ব্যবস্থাপনাও গ্রহণ করেছেন। উৎসাহ যুগিয়েছেন। মর্যাদার
কথা ঘোষণা করেছেন। ইলম শিক্ষা দানের নিমিত্ত বিভিন্ন স্থানে উস্তাদ পাঠিয়েছেন। উস্তাদ নিয়োগ করেছেন। পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করিয়েছেন। প্রতিটি মসজিদে তা’লীমের ব্যবস্থা করেছেন, সাথে সাথে লেখা শিক্ষা দানের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা করেছেন। ভিন্ন উস্তাদ নিয়োগ করেছেন। এমন ব্যবস্থা করেছেন, যাতে সমাজে কোন লোক মূর্খ বা নিরক্ষর থাকতে না পারে। বস্তুত ইসলামের শিক্ষানীতি হল-ইলমে অহীর ভিত্তিতে এমন একটি আদর্শ, সভ্য জাতি ও সমাজ গঠন করা, যে সমাজে অশিক্ষা, অপশিক্ষা, অপসংস্কৃতি, মূর্খতা, নিরক্ষরতা ও অভদ্রতার লেশমাত্র থাকবে না। মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেন- “শিশু বয়সের শিক্ষা পাথরের উপর খোদাই করা নকশার সমতুল্য।” এতদ্বারা শিশু বয়সেই শিক্ষাদানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। যেহেতু শিশু বয়সই শিক্ষা-দীক্ষার উপযুক্ত সময়। মহানবী (সঃ) কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে ইরশাদ করেছেন- “প্রতিটি শিশুই ইসলামের চরিত্রের উপর জন্মলাভ করে। নিষ্কলুষ মন-মানসিকতা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও লালন-পালনের সমুদয় দায়-দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে পিতা-মাতার ওপর। তাই, সন্তানেরা হচ্ছে পিতা-মাতার নিকট পবিত্র আমানত। তাদের সুশিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা, চরিত্রবান, সভ্য ও আদর্শ মুসলিম নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা পিতা-মাতার পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। তারা যাতে এ দায়িত্বসমূহ যথাযথ পালন এবং অশিক্ষা, অপশিক্ষা, অপসংস্কৃতি প্রভৃতি দ্বারা সন্তানদেরকে যেন বিভ্রান্ত, ধর্মহীন, ধর্মদ্রোহী, চরিত্রহীন, নাস্তিক, ইহুদী, নাসারা, মজুসী প্রভৃতি না বানায়, তৎপ্রতি সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। আমানতের খিয়ানতের জন্য শেষ বিচারের দিনে জবাবদিহীও করতে হবে বলে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেন- “শিশুরা জন্ম লাভের পরপরই তার ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামাত শুনাতে হবে। সপ্তম দিনে সুন্দর নাম রাখতে হবে। আকীকা করতে হবে। ছেলেদের খাতনা করতে হবে, মাথা কামিয়ে ফেলতে হবে এবং মাথার চুলের সম ওজনের স্বর্ণ বা রৌপ্য দান করে দিতে হবে। কথা বলা শিখলে, আল্লাহ আল্লাহ বলা শেখাতে হবে। কালেমা শেখাতে হবে। ভাল ভাল কথা শুনাতে হবে। সাত বছর বয়স হলে নামায পড়াতে হবে। দশ বছর বয়স হতে নিয়মিত নামাযী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে বেত্রাঘাত করতে হবে।”
মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেন-“শিশুরা তোমাদের আগামী দিনের নাগরিক। তাই, তাদেরকে ইলম (জ্ঞান) শিক্ষা দাও।” “শিশুদেরকে শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া দান-খয়রাতের চেয়ে উত্তম।” সন্তানদেরকে নিয়ন্ত্রণ কর। তাদের যতœ কর এবং উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।” “শিশুদের ভালবাস এবং তাদের উপর দয়া প্রদর্শন কর।” মহানবী (সঃ) এভাবে শিশুদের শিক্ষা এবং গঠন করার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আল্লাহ পাক আম্বিয়ায়ে কেরামগণকে পাঠিয়েছেন আদর্শ পথ প্রদর্শক, আদর্শ শিক্ষক এবং আদর্শ ব্যক্তি ও সমাজ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। তারপর এ কাজগুলো আঞ্জাম দেয়ার পথ ও প্রক্রিয়া কি হবে, তা-ও আল্লাহ পাক নিজেই বাতলে দিয়েছেন। নির্ধারণ করে দিয়েছেন শিক্ষার সিলেবাস ও শিক্ষাদান প্রদ্ধতি। যেমন- আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন- ব্যক্তি গঠন ও তার শিক্ষা আরম্ভ হতে হবে তিলাওয়াতুল কুরআন দ্বারা। তারপর আক্বীদা-বিশ্বাস, ঈমান-একীন, ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা এবং আমল-আখলাক গঠন করতে হবে। তারপর উলূমে কুরআন তথা কুরআনের জ্ঞান-বিজ্ঞানসমূহের জ্ঞান দান করতে হবে এবং হিকমাত অর্থাৎ সুন্নাতের তা’লীম শিক্ষা দিতে হবে। মহানবী (সঃ) আল্লাহ পাক কর্তৃক প্রদত্ত সিলেবাসের অনুসরণে মুসলিম জাতি গঠন করেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, আদর্শ, ভদ্র, সভ্য, শিক্ষিত ও উন্নত জাতিরূপে মুসলিম মিল্লাতকে তৈরি করেছেন। পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করিয়েছেন। মসজিদ কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বৃটিশের ঔপনিবেশিক শাসন আমলের পূর্ব পর্যন্ত আমাদের বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে সাতশত বছর এ ব্যবস্থাই বিদ্যমান ছিল। ফরযে আইন পরিমাণ জ্ঞান শিক্ষা দানের নিমিত্ত ছিল আশি হাজার নিম্নস্তরের মাদরাসা। আর উচ্চ শিক্ষার জন্য ছিল ২৯টি বা ৩১টি দারুল উলূম বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের মাদরাসা। তখন বাংলাদেশে কোন মুসলমান মূর্খ বা নিরক্ষর ছিল না এবং কোন মুসলমান ভিক্ষুক বা দরিদ্রও ছিল না।
তখন বাংলাদেশে চোর, ডাকাত, হাইজ্যাকার, সন্ত্রাসী, ঘুষখোর, মদখোর ইত্যাদি কিছুই ছিল না। এমনকি রাজধানী ঢাকা শহরে রাত্রের বেলায় ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে হয়। তা-ও তার জানত না।
একবার ভেবে দেখুন-আল্লাহ পাক ও তদীয় রসূল (সঃ) আমাদের সন্তানদেরকে যেভাবে গড়ে তোলার নির্দেশ ও ব্যবস্থাপনা দিয়েছেন, আমরা কি সেভাবে আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দিচ্ছি বা গড়ে তুলছি? আমাদের শিক্ষিত তরুণরা কি সবাই কলেমা সহী-শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারে ? অর্থ বুঝে? ঈমান-আকীদা, আদব-আখলাক কি, তা কি তারা বুঝে? আযান, মসজিদ, মাদরাসা, নবী, রসূল, আখেরাত, কিয়ামত, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, পাক-পবিত্রতা, সগীরা-কবিরা গোনাহ, হালাল-হারাম ইত্যাদি কি তারা যথাযথভাবে জানে ও বুঝে? অথচ আমরা সবাই চাই যে, আমাদের সন্তানেরা সভ্য, ভদ্র, সুশিক্ষিত ও শান্ত-শিষ্ট হো’ক। পিতা-মাতার বাধ্য হো’ক। সমাজের কল্যাণকামী হো’ক। তবে কেন হচ্ছে না? এ জন্য হচ্ছে না যে, আমাদের দেশের প্রচলিত সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা, যা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত, গৃহীত ও পরিচালিত, মূলতঃ তা ঔপনিবেসিক বৃটিশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত এবং ধর্মকর্ম ও নৈতিকতা বিবর্জিত নিছক বৈষয়িক শিক্ষা এবং সরকারের তোষামোদকারী, শিক্ষিত বেকার, সরকার নির্ভর আমলা সৃষ্টিকারী শিক্ষা ব্যবস্থা। আমরা তাতেই শিশুদেরকে লেখা-পড়া শেখাই। শেখাতে বাধ্য হচ্ছি। এ কারণেই আমাদের নিজস্ব আদর্শ ও চিন্তাধারা মুতাবেক সন্তাননদেরকে গড়তে পারছি না। অপরদিকে আমাদের নিজস্ব আদর্শ ও চিন্তাধারা মুতাবেক দেশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। অতএব, অগত্যা মধুসূদন হিসেবে সাধারণ শিক্ষা দিতে বাধ্য হচ্ছি। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা একান্ত কর্তব্য। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড) আপনাদের সুসংবাদ দিচ্ছে এবং সাদরে আহবান জানাচ্ছে যে, মুসলিম জাতির এ অভাব দূরীকরণের নিমিত্ত প্রথম স্তরের জন্য একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং ‘কওমী প্রাইমারী’ নামে আদর্শ প্রাইমারী চালু করেছে।
অতএব, আসুন! সন্তানদের মানুষ করার পথে এগিয়ে আসুন। এ প্রাইমারীতে শিক্ষা লাভের পর অনায়াসে শিশুদেরকে স্কুল বা মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করা যাবে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এদের পরীক্ষার ফলাফলও অনেক ভাল হবে বলে আমরা আশা করি, ইনশা আল্লাহ।
শিক্ষার্থীদের নিয়্যাত চিন্তা-চেতনা,ধ্যান-ধারণাঃ
প্রতিজন শিক্ষার্থীকে তার নিয়্যাত (তথা চিন্তা-চেতনা ও ধ্যানÑধারণা) সহীশুদ্ধ করে নেয়া আবশ্যক। অন্যথা তার জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে।
তাই, শিক্ষার্থীদের নিয়্যাত (চিন্তা- চেতনা ও ধ্যান-ধারণা) হতে হবে নিম্নরূপঃ
১. আল্লাহর পরিচয় লাভ ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন,
২. পরকালের মুক্তি,
৩. নিজের মূর্খতা দূর করা ও জ্ঞান অর্জন করা,
৪. সমাজ হতে সকল প্রকার জাহালাত তথা নিরক্ষরতা, মূর্খতা, অপশিক্ষা, অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার তাগুতি ও খোদাদ্রোহী ব্যবস্থাপনা দূর করা এবং সমাজের নিকট প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও বৈষয়িক: শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জ্ঞান পৌঁছিয়ে দেয়া।
৫. সমাজে ইসলামী আহকাম ও বিধি-বিধান এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি পূনর্জীবিত ও পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা এবং তা সংরক্ষণ করা।
৬. জ্ঞান-বিবেক ও সুস্থ- দেহ প্রাপ্তির জন্য আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করা।
কওমী মাদরাসা শিক্ষার পর্যায় ও মারহালা (স্তর) সমূহের বিবরণ
প্রথম পর্যায়ঃ
বাধ্যতামূলক শিক্ষা/ফরযে আইনের শিক্ষা
প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা/ফরযে আইন শিক্ষা নামে অভিহিত করা হয়। এখানে তিনটি স্তর রয়েছে।
১ম স্তরঃ আল মারহালাতুল ইবতিদাইয়্যাহ : কওমী প্রাইমারী/প্রাথমিক বিদ্যালয়
(সরকারী প্রাইমারী ও ইবতিদাইয়্যার সমমান)
শিশু শ্রেণী হতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত। মোট ৬ বছর।
২য় স্তরঃ আল মারহালাতুল মুতাওয়াসসিতাহ
(নিম্ন মাধ্যমিক সমমান)
৬ষ্ঠ শ্রেণী হতে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত। মোট ৩ বছর।
৩য় স্তরঃ মারহালাতুস সানাবিয়্যাহ আল আম্মাহ
(মাধ্যমিক স্তর ও দাখিল সমমান)
৯ম ও ১০ শ্রেণী। মোট ২ বছর। (কাফিয়া ও শরহেজামীর জমাআত)
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ
উচ্চ স্তরের দ্বীনী শিক্ষা/ফরযে কিফায়ার দ্বীনী শিক্ষা
উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা এখানেও তিনটি স্তর রয়েছে।
১ম স্তরঃ আল মারহালাতুস সানাবিয়াহ আল উল্ইয়া
(উচ্চ মাধ্যমিক ও আলিম সমমান)
১ম বর্ষ ও ২য় বর্ষ, (একাদশ ও দ্বাদশ-শ্রেণী) দুই বছর।
(শরহে বিকায়া ও হিদায়া আউয়ালাইন-এর জামায়াত)
২য় স্তরঃ মারহালাতুল ফযীলাত
(স্নাতক ডিগ্রী ও ফাযিল সমমান)
১ম বর্ষ ও ২য় বর্ষ, (ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শ্রেণী) দুই বছর।
(তাফসীরে জালালাইন ও মিশকাত শরীফের জামাআত)
৩য় স্তরঃ আল মারহালাতুত তাকমীল (দাওরায়ে হাদীস)
(স্নাতকোত্তর ডিগ্রী/মাষ্টার্স ডিগ্রী ও কামেল সমমান)
১ম বর্ষঃ ১৫শ শ্রেণী ও ২য় বর্ষঃ ১৬শ শ্রেণী। মোট- দুই : বছর। দাওরায়ে হাদীস।
বি: দ্র:- উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষাকে দু‘ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
একঃ উচ্চ দ্বীনি শিক্ষা, দুই: বৈষয়িক শিক্ষা। এখানে উচ্চ দ্বীনি শিক্ষার কথা আলোচনা হয়েছে।
ইলহাকী ফি-এর বিবরণ
(দরসে নিযামী ও অন্যান্য শিক্ষা ঃ বালক ও বালিকা শাখা)
ক্রমিক নং | মারহালা | ইলহাকী ফি | বার্ষিক ফি | বিবিধ | মোট |
---|---|---|---|---|---|
১ | তাকমীল (মাষ্টার্স ডিগ্রী) | ৫০০.০০ | ১০০০.০০ | ১০০.০০ | ১৬০০.০০ |
২ | ফযীলাত (স্নাতক ডিগ্রী) | ৪০০.০০ | ৮০০.০০ | ১০০.০০ | ১৩০০.০০ |
৩ | সানাবিয়া উল্ইয়া (উচ্চ মাধ্যমিক) | ৩০০.০০ | ৬০০.০০ | ১০০.০০ | ১০০০.০০ |
৪ | তাজবীদ ও ক্বিরায়াত | ৩০০.০০ | ৫০০.০০ | ১০০.০০ | ৯০০.০০ |
৫ | সানাবিয়া আম্মাহ (মাধ্যমিক) | ২৫০.০০ | ৫০০.০০ | ১০০.০০ | ৮৫০.০০ |
৬ | মুতাওয়াসসিতাহ (নিম্ন মাধ্যমিক) | ২০০.০০ | ৪০০.০০ | ১০০.০০ | ৭০০.০০ |
৭ | কওমী প্রাইমারী/কিন্ডার গার্টেন | ১০০.০০ | ২০০.০০ | ১০০.০০ | ৪০০.০০ |
৮ | তাহফীযুল কুরআন | ১০০.০০ | ২০০.০০ | ১০০.০০ | ৪০০.০০ |
৯ | আদর্শ ফুরকানিয়া মাদরাসা | ১০০.০০ | ১০০.০০ | ১০০.০০ | ৩০০.০০ |
ঢাকা মহানগরের মাদরাসার ক্ষেত্রে ইলহাকী ফি-এর বিবরণ
ক্রমিক নং | মারহালা | ইলহাকী ফি | বার্ষিক ফি | বিবিধ | মোট |
---|---|---|---|---|---|
১ | তাকমীল (মাষ্টার্স ডিগ্রী) | ৫০০.০০ | ৩০০০.০০ | ১০০.০০ | ৩৬০০.০০ |
২ | ফযীলাত (স্নাতক ডিগ্রী) | ৪০০.০০ | ২৪০০.০০ | ১০০.০০ | ২৯০০.০০ |
৩ | সানাবিয়া উল্ইয়া (উচ্চ মাধ্যমিক) | ৩০০.০০ | ২৪০০.০০ | ১০০.০০ | ২৮০০.০০ |
৪ | তাজবীদ ও ক্বিরায়াত | ৩০০.০০ | ১৮০০.০০ | ১০০.০০ | ২২০০.০০ |
৫ | সানাবিয়া আম্মাহ (মাধ্যমিক) | ২৫০.০০ | ১৮০০.০০ | ১০০.০০ | ২১৫০.০০ |
৬ | মুতাওয়াসসিতাহ (নিম্ন মাধ্যমিক) | ২০০.০০ | ১৫০০.০০ | ১০০.০০ | ১৮০০.০০ |
৭ | কওমী প্রাইমারী/কিন্ডার গার্টেন | ১০০.০০ | ৬০০.০০ | ১০০.০০ | ৮০০.০০ |
৮ | তাহফীযুল কুরআন | ১০০.০০ | ৬০০.০০ | ১০০.০০ | ৮০০.০০ |
৯ | আদর্শ ফুরকানিয়া মাদরাসা | ১০০.০০ | ৫০০.০০ | ১০০.০০ | ৭০০.০০ |
শর্টকোর্স মাদরাসার ইলহাকী ও বার্ষিক ফি-এর বিবরণ
ক্রমিক নং | মারহালা | ইলহাকী ফি | বার্ষিক ফি | বিবিধ | মোট |
---|---|---|---|---|---|
১ | তাকমীল | ৫০০.০০ | ১,০০০.০০ | ১০০.০০ | ১,৬০০.০০ |
২ | ফযীলাত | ৪০০.০০ | ৮০০.০০ | ১০০.০০ | ১,৩০০.০০ |
৩ | সানাবিয়া উল্ইয়া | ৩০০.০০ | ৬০০.০০ | ১০০.০০ | ১,০০০.০০ |
বালিকা ও মহিলা মাদরাসার ইলহাকী ও বার্ষিক ফি এবং মাসিক চাঁদার বিবরণঃ
ছেলেদের প্রাইমারী, হিফয ও দরসে নেজামী মাদরাসার মারহালার সঙ্গে বালিকা ও মহিলা মাদরাসার স্তর বিন্যস্ত রয়েছে। তাই, চাঁদার বিবরণ উহার অনুরূপই হবে।
মারহালা পরিবর্তন ফি
(ক) মারহালা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে : যে মারহালায় উন্নীত হবে, ঐ মারহালার ইলহাকী ফি-এর অর্ধেক ফি দিতে হবে। আর মাঝে কোন মারহালা থাকলে প্রতি মারহালার জন্য ৫০.০০ টাকা করে দিতে হবে।
(খ) হিফয, তাজবীদ ও ক্বিরায়াত এবং প্রাইমারী হতে দরসে নিজামীতে প্রবেশের সময় যে মারহালায় প্রবেশ করবে, সেই মারহালার পূর্ণ ফি দিতে হবে।
(গ) মারহালা পরিবর্তনের সময়ে বিবিধ ফি বাবদ ১০০.০০ টাকা প্রদান করতে হবে।
(ঘ) মারহালা পরিবর্তন করে নিচের দিকে নামানো হলে বিবিধ ১০০.০০ টাকা ফি দিতে হবে।
বেফাক-এর অধীনে পরিচালিত কেন্দ্রীয় পরীক্ষা সম্পর্কিত
জরুরী জ্ঞাতব্য বিষয়সমূহঃ
১. মাদরাসার দায়িত্ব হচ্ছে- মুহাররমের মাঝামাঝিতে পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা অনুযায়ী দফতরে বেফাক থেকে নিবন্ধন ফরম চেয়ে নিয়ে প্রতিজন পরীক্ষার্থীর নাম পুরণ করিয়ে তা মারহালাওয়ারী সাজিয়ে ৩০ শে সফর-এর মধ্যে ফি-সহ বেফাক দফতরে পৌঁছে দিতে হয়।
২. জুমাদাল উলার শুরুতে পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা অনুযায়ী দফতরে বেফাক থেকে পরীক্ষার্থী ফরম চেয়ে নিয়ে প্রতিজন পরীক্ষার্থীর নাম পুরণ করিয়ে তা মারহালাওয়ারী সাজিয়ে ১৫ই জুমাদাস সানীর মধ্যে ফি ও অন্যান্য চাঁদাসহ বেফাক দফতরে পৌঁছিয়ে দিতে হয়।
৩. ১৫ই রজবের মধ্যে প্রতি ছাত্রের নামে বেফাক থেকে বেতাকা (প্রবেশ পত্র) পাঠিয়ে দেয়া হয়।
৪. কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ইমতিহান কমিটি রয়েছে। এ কমিটিকে পরীক্ষার যাবতীয় কাজের জন্য তদারকী করতে হয়।
৫. পরীক্ষার প্রশ্নপত্রসমূহ যথোপযুক্ত হয়েছে কি না, তা যাচাই করার জন্য প্রতি বছর একটি বাছাই (তাসহীহ) কমিটি গঠন করা হয়।
৬. যে সব মারহালার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, সেগুলো হচ্ছে- মারহালাতুত তাকমীলঃ
(দাওরায়ে হাদীস- মাষ্টার্স ডিগ্রী), আল-মারহালাতুল ফযীলাত (স্নাতক ডিগ্রী), আল মারহালাতুস সানাবিয়াতুল উলইয়া ঃ (উচ্চ মাধ্যমিক), আল মারাহালাতুল মুতাওয়াসসিতাহ্ঃ (নিম্ন মাধ্যমিক), হিফযুল কুরআন (হিফয সমাপনী), ইলমুত তাজবীদ ওয়াল কিরায়াত এবং ইবতিদাইয়্যাহ (৫ম শ্রেণী)। সব মারহালায় বৃত্তি/পুরস্কার প্রদানের নিয়ম রয়েছে।
৭. দরসিয়াতের প্রতি বিষয়ের পূর্ণমান = ১০০
৮. ফলাফলের পরিভাষাসমূহ : মুমতায (বিশেষ বিভাগ/স্টারমার্ক) : ৮০% নম্বর, জায়্যিদ জিদ্দান (১ম বিভাগ) ঃ ৬৫% নম্বর, জায়্যিদ (২য় বিভাগ) ৫০% নম্বর, মাকবুল (৩য় বিভাগ) : ৩৫ নম্বর। রাসেব (ফেল) : ৩৫ নম্বর-এর কম হলে। হিফযুল কুরআন ও ইবতিদাইয়্যাহ নাযিরায় এ হিসাবের একটু ব্যতিক্রম রয়েছে। হিফয-মুমতায় (বিশেষ বিভাগ/স্টার মার্ক) : ১৭০, জায়্যিদ জিদ্দান (১ম বিভাগ) : ১৫০, জায়্যিদ (২য় বিভাগ) : ১২০, মাকবুল (৩য় বিভাগ) : ৯০। ইবতিদাইয়্যাহ (৫ম শ্রেণী) : মুমতায (বিশেষ বিভাগ/স্টার মার্ক) : ৫৬০, জায়্যিদ জিদ্দান (প্রথম বিভাগ) : ৪৫৫, জায়্যিদ (২য় বিভাগ) : ৩৫০, মাকবূল (৩য় বিভাগ) : ২৪৫।
৯. মারহালা সমূহের পরীক্ষার সর্বমোট নম্বরঃ
মারহালাতুত তাকমীল-১১০০ নম্বর, (তাজবীদের ১০০ নম্বরসহ) মারহালাতুল ফযীলাত ৮০০ নম্বর। মারহালাতুস সানাবিয়াতুল উল্ইয়্যা-৭০০ নম্বর, মারহালাতুল মুতাওয়াসসিতাহ-৭০০ নম্বর, হিফযুল কুরআন-২০০ নম্বর, ইলমুত তাজবীদ ওয়াল কিরায়াত-৩০০ নম্বর এবং মারহালাতুল ইবতিদাইয়্যাহ (৫ম শ্রেণী) ৭০০ নম্বর।
১০. রেয়াতী নম্বর (গ্রেছ) সর্বমোট অনুর্ধ ১০ নম্বর পর্যন্ত এবং যে কোন একটি মাত্র বিষয়ে এবং শুধু পাশের জন্য এ রেয়াতী নম্বর দেয়া হয়ে থাকে। যারা রেয়াতী নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়, তাদের কোন ডিভিশন দেয়া হয় না। নাজেরা ও হিফয (ইয়াদ ও তাজবীদ) বিষয়ে কোন রেয়াতী নম্বর নেই।
১১. প্রতি মারহালার কিতাব/বিষয়গুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মি’ইয়ারী ও গর মি’ইয়ারী। প্রতি মারহালার মি’ইয়ারী কিতাবসমূহঃ
মারহালাতুত তাকমীলঃ
(১) বুখারী শরীফ ১ম জিলদ
(২) মুসলিম শরীফ ১ম জিলদ
(৩) তিরমিযী শরীফ ১ম জিলদ ও
(৪) আবূ দাউদ শরীফ মুকাম্মাল
মারহালাতুল ফযীলতঃ
(১) মিশকাত শরীফ ১ম জিলদ
(২) তাফসীরে বায়যাবী ও
(৩) শরহে আকাইদে নাসাফী।
আল মারহালাতুস সানাবিয়াতুল উল্ইয়াঃ
(১) মুখতাছারুল মাআনী
(২) নূরুল আনওয়ার (১ম অংশ) ও
(৩) মাকামাত।
আল মারহালাতুল মুতাওয়াস্সিতাহঃ
(১) নাহবে মীর
(২) পাঞ্জেগাঞ্জ/ইলমুস সরফ ও
(৩) রওযাতুল আদব।
আল মারহালাতুল ইবতিদাইয়্যাহ (৫ম শ্রেণী)
(১) বাংলা
(২) গণিত
(৩) উর্দূ ও
(৪) নাজিরা।
মারহালাতু হিফযিল কুরআনঃ
(১) তিলাওয়াত (ইয়াদ) ও
(২) তাজবীদ
মারহালাতু ইলমিত তাজবীদ ওয়াল ক্বিরায়াতঃ
(১) তারতীল ও
(২) হদর।
১২. মি’ইয়ারী একটির অধিক বা গর মি’ইয়ারী দুইটির অধিক বা মি’ইয়ারী ও গর মি’ইয়ারী মিলিয়ে দু’টির অধিক বিষয়ে (কিতাবে) কেউ ফেল করলে, কোন অবস্থাতেই তাকে পাশ বলে গণ্য করা হবে না। আর বুখারী শরীফ ১ম ও তিরমিজি শরীফ ১ম-এর একটিতে ফেল করলেও পাশ বলে গণ্য হবে না। বরং উক্ত ফেল করা কিতাবের পুনঃ পরীক্ষা দিতে হবে। এ পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ পরীক্ষায় পাশ করলে কেবল পাশ বলে গণ্য হবে।
১৩. বুখারী শরীফ ১ম ও তিরমিযী শরীফ ১ম ব্যতীত মি’ইয়ারী এক কিতাবে বা গর মি’ইয়ারী এক কিতাবে অথবা দুই কিতাবে বা মি’ইয়ারী এক কিতাবে ও গর মি’ইয়ারী এক কিতাবে ফেল করার পর গড়ে পাশের নম্বর থাকলে তাকে কেবল পাশ বলে গণ্য করা হবে, ডিভিশন পাবে না।
১৪. প্রতি বছর পরীক্ষার পূর্বক্ষণে নেগরানে আ’লাবৃন্দের (হল পরিচালকদের) প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করা হয়।
১৫. পরীক্ষার পূর্বে পরীক্ষকবৃন্দেরও একটা ওয়ার্কশপ (কর্মশালা) অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তারপর পরীক্ষার খাতা বণ্টন করা হয়।
১৬. ১লা রমযানের পূর্বে পরীক্ষকদের নিকট হতে খাতা ও নম্বরপত্র নিয়ে আসা হয়।
১৭. খাতা ও নম্বরপত্র আসার পর নিরীক্ষণ কমিটি নিরীক্ষণের কাজ আরম্ভ করেন।
১৮. ২৫ শে রমাযান পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। মারকাযে ও মাদরাসায় ফলাফল পাঠিয়ে দেয়া হয়। সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে পত্রিকায় দেয়া হয় এবং দফতরে লটকিয়ে দেয়া হয়।
১৯. ফলাফলের উপর কারো কোন আপত্তি থাকলে তা পেশ করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়া হয়। অতঃপর পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মাদরাসার তালিকা ও মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের নাম পুস্তকাকারে (গেজেট) প্রকাশ করা হয়।
২০. ফলাফলের ব্যাপারে অভিযোগ ও পুনঃ খাতা দেখার আবেদন পেশ করার জন্য ৩০ শে শাওয়াল পর্যন্ত মাদরাসা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বরাবরে দরখাস্ত পেশ করতে হয় এবং প্রতি খাতার জন্য সংশ্লিষ্ট মারহালার পরীক্ষার ফিসের সম পরিমাণ ফিস দাখিল করতে হয়।
২১. প্রতি মারহালা উত্তীর্ণদেরকে সনদ ও নম্বরপত্র (মার্কশীট) প্রদান করা হয়। সনদসমূহ মাদরাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে মাদরাসায় পাঠাবার পূর্বে কারো সনদের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মাদরাসার মোহতামেম সাহেবের পত্র এবং নির্ধারিত ফরমে দরখাস্ত পেশ করতে হবে। সকল নম্বর পত্রের (মার্কশীটের) জন্য এবং ১৪০৬ হিজরীর পূর্বের সনদের জন্য এবং সাময়িক সনদের জন্য নির্ধারিত ফিস প্রদান করতে হয়।
২২. জামাআত খানার প্রতি ১৫০জন পরীক্ষার্থীর বিপরীতে ১জন করে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ ধরা হয় ও পুরষ্কার প্রদান করা হয়। হিফযুল কুরআনের প্রত্যেক জোনের প্রথম তিনজনকে ও ইলমুত তাজবীদ ওয়াল ক্বিরায়াতের প্রথম তিনজনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
২৩. তাকমীল ও ইলমুত তাজবীদ ওয়াল ক্বিরায়াত মারহালা ব্যতীত সকল মারহালার মেধা তালিকায় উত্তীর্ণদের মুমতায হওয়ার শর্তে বৃত্তি দেয়া হয়।
২৪. প্রাইভেট পরীক্ষার নিয়ম ঃ কোন ছাত্র প্রাইভেটভাবে পরীক্ষা দিতে চাইলে বেফাকভুক্ত কোন মাদরাসার মাধ্যমে ‘প্রাইভেট’ নামে পরীক্ষা দিতে পারে।
২৫. প্রশ্নপত্র : মারকাযী ইমতিহানে ৫ম শ্রেণীর প্রশ্নপত্র বাংলায়, মুতাওয়াসসিতার প্রশ্নপত্র উর্দূ/বাংলায় এবং অন্যান্য মারহালার প্রশ্নপত্র আরবী ভাষায় হয়ে থাকে এবং উত্তর পত্র আরবী, উর্দূ ও বাংলার যে কোন একটি মাত্র ভাষায় সম্পূর্ণ জবাব লেখার অনুমতি রয়েছে। একই প্রশ্নের উত্তরে দুই ভাষার মিশ্রণ গ্রহণযোগ্য নয়।
২৬. ইবতিদাইয়্যাহ ব্যতীত অন্যান্য মারহালার প্রতি বিষয়ের প্রশ্নপত্র হয়ে থাকে ৫টি এবং এর যে কোন তিনটির উত্তর দিতে হয়। আর ইবতিদাইয়্যাহ মারহালায় ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
২৭. প্রশ্নপত্র কাউকে পড়ে দেয়া হয় না। নিজেদেরকেই পড়ে বুঝে নিতে হয়। অবশ্য ছাপা ভুল হলে শুধু অক্ষরগুলো বাতলে দেয়া হয়। তবে ইবতিদাইয়্যাহ এর ব্যতিক্রম।
২৮. পরীক্ষায় যাতে কোন প্রকার দুর্নীতি না হয়, সে দিকে কড়া দৃষ্টি রাখা হয়।
২৯। জিমনী পরীক্ষা : যারা শুধু বুখারী শরীফ ১ম জিলদ বা তিরমিযী শরীফ ১ম জিলদ-এ ফেল করবে, তারা পরবর্তী পরীক্ষায় শুধু উক্ত কিতাবের পরীক্ষা দিতে পারবে। এ কিতাবে পাশ করলে পাশ বলে গণ্য হবে।
৩০. মানোন্নয়ন পরীক্ষা : কেউ ভাল নম্বর করার জন্য দ্বিতীয়বার পূর্ণ পরীক্ষা দিতে চাইলে দিতে পারবে।
কওমী মাদরাসার হযরত মোহতামেম সাহেবান এবং আসাতিযায়ে কিরামের প্রতি
উদাত্ত আহবানঃ
১. সর্বদা নিজকে দ্বীনের ও সমাজের খাদেম মনে করুন। তা হলে জাতির শিক্ষাগুরু হিসেবে বিবেচিত হবেন।
২. নবীর ওয়ারিস হিসেবে আদর্শ মানুষ তৈরির কারিগর হিসেবে নিজকে প্রমাণিত করুন।
৩. আপন মহিমায় জাতির আদর্শ হিসেবে নিজকে প্রতিষ্ঠা করুন।
৪. যথাযথভাবে সার্বিক দ্বীনী দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজকে জাতির জনক, রাহবার, উস্তাদ, মুরব্বী, পথ প্রদর্শক ও কর্ণধার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করুন এবং সাথে সাথে আমর বিল মারূফ ও নাহী আনিল মুনকার-এর দায়িত্বও পালন করুন।
৫. প্রথমেই নিজকে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে, অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করুন। পিতা-মাতার মত হয়ে আদর সোহাগ করে, মানুষ বানাবার মানসিকতা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রী পড়াবেন ও শিক্ষা দিবেন। তাদেরকে সামগ্রিক চরিত্রে চরিত্রবানরূপে গড়ে তুলুন। বৈধ কাজসমূহে নিরব থেকে সম্মতি দিবেন এবং অবৈধ কাজে বাধা দিবেন ও বুঝিয়ে দিবেন।
৬. দরস ও তাদরীসের মধ্যে ইখলাছ ও লিল্লাহিয়াত থাকতে হবে। দ্বীন রক্ষা ও প্রচারের নিয়্যাতে তা’লীম দান করতে হবে।
৭. শিক্ষার্থীদের মঙ্গল কামনা করে শিক্ষা দান করতে হবে এবং তাদের জন্য দু’আও করতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীদের সময়ের প্রতি খেয়াল রেখে উস্তাদকে কথা বলতে হবে।
৯. শিক্ষার্থীদের বোধগম্যতা ও বুঝকে সামনে রেখে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে।
১০. ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশে সহযোগিতা করবেন। মেধা ও প্রতিভার ভিত্তিতে তাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবেন এবং সেই ময়দানের মডেল তৈরি করবেন। এভাবে নিজকে সফল শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিবেন এবং সকল ক্ষেত্রের কর্ণধার তৈরি করবেন। যাতে তারা সমাজের সকল ক্ষেত্রের কর্ণধার, বুদ্ধিজীবি তৈরি হয়ে যায়।
১১. নিজের মেধা ও প্রতিভা নির্ণয় করে নিজকে সেই ময়দানের আদর্শ বানান। বিষয় ভিত্তিক পারদর্শীতা অর্জন করুন। দক্ষ হউন, গবেষক হউন, ব্যাপকভাবে মুতালাআ করুন। কলমওয়ালা হউন।
১২. দাওয়াতী কাজ করুন। প্রতিটি ঘর থেকে একজন করে ছাত্র এনে মাদরাসায় পড়িয়ে আলেম বানিয়ে দিন।
১৩. দ্বীনের দাওয়াত দিন। নায়েবে নবীর জিম্মাদারীর অনুভুতি জাগ্রত করুন, এ জিম্মাদারী আপনার দ্বারা আদায় হচ্ছে কি না আপন মনে তার হিসাব কষুণ। বছরে একটা চিল্লা দিন। কম হলেও এক সপ্তাহ সময় দিন। এ ময়দানে আলেমদের সক্রিয় ভূমিকা রাখা অপরিহার্য।
১৪. যখন দেশে যান, তখন পাড়ার মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত করুন। কুশল বিনিময় করুন। দ্বীনের দাওয়াত দিন। এ কাজ করাকে অভ্যাস বানিয়ে নিন।
১৫. দরসের সঙ্গে অন্য মাশগালা না রাখা ভাল। যেমন- টিউশনি করা, ব্যবসায়ী হওয়া, ওয়াযের পেশা গ্রহণ করা, সক্রিয় রাজনীতি করা ইত্যাদি পরিহার করুন । ক্ষুরধার লেখনীর অধিকারী হোন।
১৬. তা’লীম দানের সঙ্গে কলমের ব্যবহার অপরিহার্যরূপে গ্রহণ করুন।
১৭. সংসার নির্বাহের জন্য হালকা ধরণের ব্যবসা, কৃষি ইত্যাদি রাখা বাঞ্ছনীয়।
১৮. জাতীয় অন্যান্য দায়িত্ব পালনেও সতর্ক থাকতে হবে। তবে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করবেন না। যেমন- রাজনীতি করাঃ শিক্ষকতার সঙ্গে রাজনীতির পেশা গ্রহণ করা এবং সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করা এ যুগে আদৌ সমিচীন মনে করি না।
১৯. বেফাক-এর দাওয়াত দিন। এক প্লাটফরমে ঐক্যবদ্ধ থাকার ফযীলত ও ইসলামের বিধান বুঝিয়ে দিন।
২০. মওদূদী ফিতনা থেকে দূরে থাকুন। সমাজ থেকে মওদূদী ফিতনাসহ সকল ফিতনা দূর করার চেষ্টা করুন।
২১. শিক্ষার্থীদের সামনে কদাচ অশালীন আচরণ, অশ্রাব্য বক্তব্য প্রদান বা কারোর বিরুদ্ধে কোন প্রকার কুৎসা বর্ণনা বা কটুক্তি করবেন না।
২২. শিক্ষার্থীদের অছিলা করে ইলম অর্জনের মেহনত করবেন।
২৩. সমাজ থেকে অজ্ঞতা ও মূর্খতা দূরীকরণের ব্যবস্থা করবেন।
২৪. প্রতিটি মাদরাসাকে নিজ এলাকার মধ্যে সমাজ সেবামূলক কাজে নেতৃত্ব দিতে হবে।
২৫. শিক্ষার্থীদের সামনে নিজকে সুন্নাতের মূর্ত প্রতিক হিসেবে পেশ করার মেহনত করুন।
২৬. বছরে অন্ততঃ একবার ছাত্র গার্জিয়ানদের নিয়ে বৈঠক করে ছাত্রদের প্রতি গার্জিয়ানদের করণীয় কর্তব্য
৩৫. প্রতিটি বড় মাদরাসায় ছাত্রদের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করা। তবে কঠোর তত্ত্বাবধান করতে হবে।
৩৬. ছাত্র ভর্তির ও উস্তাদ নিয়োগের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
৩৭. মাদরাসা পরিচালনার নীতিমালা অনুসরণ করে মাদরাসা পরিচালনার মান উন্নত করুন।
৩৮. প্রতিটি কওমী মাদরাসাকে তার আশ-পাশের মসজিদসমূহ আবাদ করার ব্যবস্থা করতে হবে। শুক্রবারের খতিব দিন। যোগ্য ইমাম, মুয়ায্যীন সরবরাহ করুন। পাঁচবেলা যথারীতি আযান, জামাআত ও সকাল বেলায় মকতব, বাদ মাগরিব বয়স্ক শিক্ষা, মাতৃজাতির শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যাতে কোন মুসলমান মূর্খ বা নিরক্ষর থাকতে না পারে।
৩৯. ছোট বড় সকল কওমী মাদরাসাকে মুরব্বীদের হাতে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান বেফাক-এর পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
৪০. প্রতিটি পাড়ায়, জনসমাগমের স্থানে, বাজারে, অফিসের নিকটে, ষ্টেশনে পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।
৪১. প্রতিটি কওমী মাদরাসাকে ও প্রতিজন কওমী আলেমকে দেশ গড়া, দেশ পরিচালনা করা, উন্নত করা ও দেশের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে।
৪২. ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে।
৪৩. আবাসিক মাদরাসার ছাত্রদেরকে নিয়মিত ব্যায়াম ও পিটি করতে হবে।
৪৪. সারা জীবন নিজকে তালিবে ইলম মনে করবেন এবং সর্বদা দ্বীনের জ্ঞান আহরণ করবেন।
৪৫. দ্বীন রক্ষা ও প্রচারে কলম ব্যবহার করবেন। এতদ্ নিমিত্ত দক্ষ ও ক্ষুরধার লেখনীর অধিকারী হোন।
৪৬. ছাত্র-ছাত্রীদের ঘরগুলোকে দ্বীনী ঘরে পরিণত করুন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে ঘরে ঘরে দ্বীন পৌঁছাবার কর্মসূচী গ্রহণ করুন। প্রতিটি ঘরে বাদ মাগরিব তা‘লীমের ব্যবস্থা করুন।
৪৭. প্রতিটি মাদরাসার দায়িত্ব হবেÑ এলাকার প্রতিটি ঘরকে দ্বীনী ঘরে পরিণত করা এবং এলাকার মধ্যে ইসলামী পরিবেশ গড়ে তোলা।
৪৮. মাদরাসার/মসজিদের মহল্লার প্রতিটি বাড়ীতে দ্বীনী পরিবেশ তৈরি করে দিন।
৪৯. প্রতিটি মহল্লায় মা-বোনদের জন্য সাপ্তাহিক/ দৈনিক তা‘লীমের ব্যবস্থা করুন।
৫০. মুসলমানদের প্রতিটি বাড়ীতে মা-বোনদের নামায পড়ার ও ই‘তিকাফ করার নিমিত্ত আলাদা নামায ঘর/কামরার ব্যবস্থা করুন।
৫১. প্রতিটি কওমী মাদরাসায় পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করুন, ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও এলাকার লোকদের পড়ার সুযোগ দিন।
৫২. সপ্তাহের শুক্রবারে ১ ঘন্টা সময় দিয়ে ছাত্রদের মাধ্যমে পাড়ার ঘরে ঘরে বই পৌঁছান। এক শুক্রবার পৌঁছাবেন এবং পরবর্তী শুক্রবারে আরেকটা দিয়ে পুরাতনটা নিয়ে আসবেন।
তাকমীল মূলতঃ ২ বছরের কোর্স। এক বছর দাওরায়ে হাদীস। আর দ্বিতীয় বছর থাকবে বিষয় ভিত্তিক।
২য় বছরের জন্যঃ নিচের বিষয়সমূহ হতে যে কোন ১টি বিষয় গ্রহণ করতে হবে। তা হলে মাষ্টার্স ডিগ্রির ১৬ বছর পূর্ণ হয়।
০১. আরবী ভাষা + ব্যাকরণÑরচনা+বালাগাত+ রচনা।
০২. বাংলা ভাষা + ব্যাকরণ Ñ রচনা + বালাগাত
০৩. ইংরেজী ভাষা + গ্রামার + রচনা
০৪. ফারসী ভাষা + কাওয়ায়েদ + মাকালা
০৫. উর্দূ ভাষা + কাওয়ায়েদ + মাকালা
০৬. তিলাওয়াতুল কুরআন + তাজবীদ
০৭. গণিত + জ্যামিতি
০৮. হাদীস + উলূমে হাদীস + উছুলে হাদীস
০৯. তাফসীর + উছুলে তাফসীর + তারিখে তাফসীর + তারিখে মুফাসসিরীন
১০. ফিকহ+ উছুলে ফিক্হ + তারীখে ফিক্হ +তারীখে ফুকাহায়ে কিরাম
১১. আকাইদ + কালাম + তারিখে কালাম
১২. ইসলামের দর্শন
১৩. সাধারণ বিজ্ঞান
১৪. রসায়ন শাস্ত্র
১৫. প্রাকৃতিক বিজ্ঞান
১৬. রাষ্ট্রবিজ্ঞান
১৭. ইসলামের অর্থনীতি
১৮. ইসলামের সমাজ বিজ্ঞান
১৯. ইসলামের পরিবার বিজ্ঞান
২০. ইসলামের পৌর বিজ্ঞান
২১. ইসলামের মনোঃবিজ্ঞান
২২. ইসলামের ইতিহাস + সীরাত
২৩. ভূগোল
২৪. জ্যোতিঃর্বিজ্ঞান
২৫. হিসাব বিজ্ঞান
২৭. মুনাযারা
২৮. জ্যামিতি
২৯. তাহরীকে দেওবন্দ
৩০ ইসলামের আখলাক
৩১. শিক্ষাদান পদ্ধতি
৩২. তাযকিয়াহ
৩৩. সমাজসেবা
৩৪. আমর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকার
৩৫. দাওয়াত ও তাবলীগ
৩৬. দারুল উলূম দেওবন্দ।
সমাপ্ত