মাওলানা মাহফুজুল হক

( মহাসচিব এর বাণী )

নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লী ‘আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মা বা‘দ। মুসলমানদের অস্তিত্বের, উত্থানের ও উন্নয়নের একমাত্র পথ ও পাথেয় হলো কোরআন ও হাদীসের জ্ঞান আহরণ ও ধারণ করে তার উপর জীবন পরিচালনা করা।


কোরআন-হাদীসের শিক্ষা ব্যতীত যেমন কোন মুসলমানের অস্তিত্ব থাকে না, তেমনি এই জ্ঞান শিক্ষার মাধ্যম মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা ব্যতীত মুসলিম জাতির অস্তিত্বও থাকে না। তাই যতদিন মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা ছিল মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা, ততদিন মুসলিম জাতি ছিল সারা বিশ্বের শিক্ষাগুরু। যে দিন মুসলমানগণ এ শিক্ষা ছেড়ে দিয়েছে, সেদিন থেকে তারা মর্যাদার আসন হারিয়েছে। ফলে যে জাতি একদিন সারা দুনিয়ায় নেতৃত্বের আসন অলঙ্কৃত করেছিল, মানবজাতিকে সভ্যতার পথ দেখিয়েছিল আজ সেই মুসলিম জাতি হয়েছে বিজাতির গোলাম এবং বিজাতিরা হয়েছে মুসলমানদের প্রভু। কোরআনের জ্ঞানের ভান্ডার হলো আসল সম্পদ। এ সম্পদ যখন মুসলমানদের হাতে ছিল, তখন ছিল তারা জ্ঞানী ও সম্পদশালী। যখন তারা কোরআন ছেড়েছে, তখন তারা হয়েছে সর্বহারা ।


বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত সুদৃঢ়ভাবে মুসলমানদের একমাত্র জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার ভিত রচনা ও লালন করে গিয়েছেন। তাঁর তিরোধানের পর বহু শতাব্দী যাবত সারা বিশ্বে মুসলমানেরা জ্ঞান-বিজ্ঞান বিতরণ ও উন্নয়ন, মনীষা সৃষ্টি, ধর্মীয় ও বৈষয়িক জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি ইত্যাদিতে বহুমুখী অবদান রেখেছে। এ সময় সকল ক্ষেত্রে শত সহস্র মুসলিম মনীষীও সৃষ্টি হয়েছেন। এ কারণে সারা বিশ্ব সকল ক্ষেত্রে মুসলমানদের নিকট ঋণী। মুসলিম মনীষী হিসেবে আজ আমরা যাদের স্মরণ করি, তারা সবাই এ মাদরাসা শিক্ষাধারার ফসল। মাদরাসা শিক্ষার মূল বৈশিষ্ট্য হলো-
১। আসমানী শিক্ষাকে জ্ঞানের মূল স্বীকার করে এ শিক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা। ২। বৈষয়িক জ্ঞানসমূহের যা কল্যাণকর, তা গ্রহণ করা এবং আসমানী জ্ঞানের আলোকে তাতে সংস্কার করা। ৩। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক প্রবর্তিত শিক্ষা ধারার উপর অনড় থাকা। এ বৈশিষ্ট্যত্রয়ের কারণে মাদরাসা শিক্ষার যুগে মুসলমানরা বহুমুখী অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশে ঐ বৈশিষ্ট্যের ধারক দারুল উলূম দেওবন্দের আদর্শের অনুসরণে মাদরাসাসমূহের সার্বিক উন্নতি কল্পে গঠিত বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড) এ যুগের কওমী মাদরাসাসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করে ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক প্রচার-প্রসার এবং ইসলামী শিক্ষার বিপ্লব ঘটিয়ে মুসলমানদের সার্বিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


বর্তমানে বেফাকের মাধ্যমে যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে-
(১) মাদরাসাসমূহের নেছাবে তা‘লীম নিয়ন্ত্রণ।
(২) মাদরাসাসমূহের তা‘লীম ও তারবিয়াতের মান উন্নয়ন।
(৩) কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণ, সনদ ও বৃত্তি প্রদান।
(৪) পাঠদান পদ্ধতির উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ।
(৫) ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশ।
(৬) যোগ্য শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দান।
(৭) মাদরাসা পরিদর্শন।
(৮) মাদরাসার হিসাব নিরীক্ষণ।
(৯) নিরক্ষরতা ও মূর্খতা দূরীকরণ।
(১০) আধুনিক সমস্যাবলির ইসলামী সমাধান পেশ। আর এতদনিমিত্ত মুফতী বোর্ড বাংলাদেশ, পরিচালনা।
(১১) মসজিদ ও মাদরাসার মাধ্যমে নিরক্ষরতা ও মূর্খতা দূরীকরণ এবং ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।


আমরা আল্লাহ পাকের দরবারে এই দোয়া করি, তিনি যেন বেফাককে তার অভীষ্ট লক্ষ্য পানে এগিয়ে যাওয়ার তাওফীক দেন। বাংলাদেশে কওমী মাদরাসা তার ইতিহাসে ঐতিহ্য ধরে রেখে ইলমে ওহীর আসমানী আলোয় দেশ, জাতি, সমাজ ও সংস্কৃতিকে আলোকিত করার প্রায়াস অব্যাহত রাখুক।